পিরোজপুর জেলা বাস টার্মিনাল নানা সমস্যায় জর্জরিত। এতে যাত্রী, বাসমালিক, পরিবহন শ্রমিক ও বাস কাউন্টারের প্রতিনিধিদের দুর্ভোগ বাড়ছে। গণশৌচাগারের অবস্থা ব্যবহার অনুপযোগী।
দ্বিতল এ ভবনটির অভিভাবক পিরোজপুর পৌরসভা হলেও ১৪ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ যখন এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ করে, তারপর থেকেই ভবনটির অবস্থা বেহাল হতে থাকে। ২০০৩ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পিরোজপুর পৌরসভা মিউনিসিপ্যাল সাপোর্ট প্রজেক্টের (এমএসপি) অধীনে যৌথভাবে টার্মিনাল নির্মাণ করে। পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের পাশে ২.৮৯ একর জমির ওপর টার্মিনাল ভবন, ইট বিছানো আভ্যন্তরীণ সড়ক, গাড়ি ধোয়ার র্যাম্প, ড্রেন ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালের নিচতলায় মোট ৯ কাউন্টার রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটের বাসের টিকিট বিক্রেতারা বসেন। এ তলায় যাত্রীদের অপেক্ষাগার, টয়লেট, লবি ইত্যাদি রয়েছে। দোতলায় রয়েছে বাসমালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের পৃথক পৃথক অফিস। বর্তমানে টার্মিনালের ছাদের অবস্থা নাজুক। শুরুতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহূত হওয়ায় বৃষ্টি ও রোদে ছাদের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরে বিনষ্ট হয়েছে। এ কারণে বর্ষার পানি চুইয়ে পড়ে ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে বড়ো বড়ো পিলারের সংযোগস্থলে ছাদে ফাটল ধরে পানি চুইয়ে পড়ে পিলারের গায়ে শ্যাওলা জমছে। টার্মিনাল ভবনের দেয়াল ও মেঝের কোথাও কোথাও প্লাস্টার, রং উঠে গেছে, দেয়ালে শ্যাওলা পড়ে গেছে। উঠে গেছে প্লাটফরমের ঢালাই, ব্যবহূত ইটও কোথাও কোথাও লাপাত্তা। টয়লেটগুলোর অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থা বলে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং এর ভেতরের প্যান, পাইপ, ট্যাপ, বেসিন ইত্যাদি বিনষ্ট হয়ে এখন ব্যবহার অনুপযোগী।
প্রায় ১৩ লাখ টাকার বার্ষিক ইজারা ব্যবস্থায় চলছে বাস টার্মিনাল পরিচালনা এবং ব্যবহারকারী বাস-ট্রাক ও টিকিট কাউন্টার থেকে নির্ধারিতহারে টোল ও ভাড়া নেওয়া হয় বলে জানান, বাসমালিক শহিদুল ইসলাম সরদার। তিনি বলেন, বর্তমানে লোকাল সার্ভিস থেকে দিনে ৩০ টাকা ও আন্তঃজেলা সার্ভিস থেকে দিনে ৫০ টাকা টোল নেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন আগেও প্রতি ট্রিপে এই পরিমাণ টাকা দিতে হতো। এছাড়া পৌর এলাকার সড়ক ব্যবহারকারী ট্রাক ও বাস থেকেও টোল নেওয়া হয়। বাস টার্মিনালের একাংশে স্টল থাকলেও আরেক অংশে নির্মিত ও অর্ধনির্মিত অবস্থায় কিছু স্টল পড়ে রয়েছে।
বাস টার্মিনালের দুরবস্থা নিয়ে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক ইত্তেফাককে বলেন, পৌরসভা থেকে ভবনটিকে একবার মেরামত করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শেষে আবারও মেরামত করা হবে।
পিরোজপুর পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শামীমুর রহমান জানান, এই ভবন নির্মাণের সময়ই ছাদ, পিলার, প্লাটফরম ইত্যাদি ডিজাইনে ত্রুটি ছিল। সে কারণে পরে বৃষ্টির পানিতে এসব নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঘনঘন মেরামত করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। টার্মিনাল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত ব্যয় হয়।