বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদকাসক্তি

এই ব্যাধি রুখতে হবে

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০৩

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাদকাসক্তি এমন মানসিক বা শারীরিক প্রতিক্রিয়া যা জীবিত প্রাণী ও মাদকের মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়। এ প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলো হলো, মাদকদ্রব্যটি কমবেশি নিয়মিত গ্রহণের দুর্দমনীয় ইচ্ছা, মাদকদ্রব্য সৃষ্টির ফল বা প্রতিক্রিয়া পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এর ভয়াবহতা নিয়ে আজ সর্বমহল উদ্বিগ্ন। এর ভয়াবহতার তীব্রতায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অশান্তি বিরাজ করছে। সরকার এর ভয়াবহতা রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সর্বমহলে সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে এর সুফল পেতে অনেক সময় লাগবে।

যে কোনো বয়স থেকেই এর আসক্ততা শুরু হতে পারে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কৌতূহলবশত বা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। অনেকে আবার মানসিক চাপ, ক্রোধ, হতাশা বা উদ্বেগ থেকে এর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। পুনপুন ব্যবহারের ফলে ক্রমান্বয়ে আসক্ততা বেড়ে যায়। মাদকের এই নেশার জালে একবার জড়ালে বেরিয়ে আসা দুঃসাধ্য।

আমাদের অবহেলার কারণে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মানসিক চাপ, ক্রোধ, হতাশা আর উদ্বেগে ভোগে। এ থেকে তারা মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে তাদের জীবন থেকে ভালো বিষয়গুলো দূরে চলে যায়। মানসিক ভারসাম্যহীনতা বেড়ে যায়। ফলে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষমতা লোপ পেয়ে যায়। বিদ্যালয় যা কর্মক্ষেত্রে অনিয়ম বা অনাগ্রহ লক্ষ করা যায়। শারীরিক ও মানসিক শক্তি, ওজন সবই কমে যায়। চোখ লালাভ হয়। পোশাকের বৈচিত্র্যে অনাগ্রহ দেখা যায়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে আচরণের পরিবর্তন দেখা যায়। একাকী বা বিশেষ বন্ধুদের সঙ্গে রুমে আলাদা সঙ্গ দেয়। দৈনন্দিন কর্মতালিকা এলোমেলো হয়। ঝিমুনি বাড়ে, স্বাস্থ্য সচেতনতা কমে যায়, মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। যৌক্তিক কারণ ছাড়া নানা অজুহাতে টাকা চায় এবং মাঝে মাঝে টাকা চুরির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। শুকনো মুখ, মনোযোগের প্রবণতা হ্রাস, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে অভিভাবকদের প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাদকাসক্ততা চিকিত্সাযোগ্য ও আরোগ্য লাভ সম্ভব। যথাযথ ব্যবস্থা  নেওয়ার পরও সেদিকে পুনরায় ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই চিকিত্সা শেষে কর্মে ব্যস্ত রাখা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, চিকিত্সা ও মানসিক থেরাপির যৌথ ব্যবস্থাপনায় এর সফলতার মাত্রা বেশি। এর যথাযথ চিকিত্সাব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে লিভার প্রসারিত হয়, বুক ও ফুসফুস নষ্ট হয়।

শিক্ষক, পিতামাতা, স্বাস্থ্যকর্মীগণ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এর প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিশেষভাবে পিতামাতাকে সন্তানদের যথাযথ তত্ত্বাবধান করতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে অধিক সময় দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকের অপব্যবহার ও ঝুঁকিসমূহ তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের সমস্যাসমূহ শুনে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। মাঝে মাঝে পরামর্শ বিনিময় করতে হবে। তাদের সুপ্ত প্রতিভা অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মাদকের ভয়াবহতার বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরতে হবে। সন্তানদের মাঝে সদ্ভাব গড়ে তুলতে হবে।  যুবসমাজকে কর্মসংস্থান বা আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দেশের সীমান্তে মাদক প্রবেশের রুটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। সকল মহলের সার্বিক সহযোগিতায় মাদকমুক্ত সুখী সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

n লেখক: গবেষক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট,

সার্ক টিচার্স ফেডারেশন