শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবর্জনার অর্থনীতি

আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০৫

গোলাম সারোয়ার

রাজধানী ঢাকা দিন দিন আবর্জনার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রায়ই শোনা যায় ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরী। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, আবর্জনার অব্যবস্থাপনা, বাসাবাড়ির আবর্জনা ইত্যাদি ঢাকাকে দিন দিন বিষাক্ত নগরী বানাচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট বর্জ্যের ৩৭ শতাংশ এবং পরিমাণে প্রায় ৭ হাজার টন আবর্জনা  আসে ঢাকা থেকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মাত্র ৪২ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করতে পারে।

অনুমান করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে ২০২৫ সাল নাগাদ ঢাকা শহরে প্রায় ৪৭০৬৪ টন আবর্জনা উত্পাদিত হবে। তখন কী ঢাকা শহরে আদৌ বাস করা যাবে? এই আবর্জনা একাধারে যেমন বায়ুকে দূষিত করে তেমনি নদী দূষণসহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। বুড়িগঙ্গার পানির রঙ কেমন তা সবাই জানে এবং আদৌ এটাকে পানি বলা যায় কী না তা নিয়ে জনমনে রয়েছে সংশয়। ঢাকার বাতাস আজ বিষাক্ত। সামপ্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে ডায়বেটিসের অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। ঢাকার বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা আগামী দিনে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কিন্তু বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা একাধারে যেমন পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারে তেমনি অর্থনীতির চাকাকেও সচল করতে পারে। বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুত্, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উত্পাদন করছে। তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রে জ্বালানির উত্স হিসেবে কয়লার পরিবর্তে আবর্জনা ব্যবহারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কয়লা প্রাকৃতিক সম্পদ। এটা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে আবর্জনার ব্যবহারের রয়েছে বিশাল সুযোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি হচ্ছে তা দিয়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধান চাহিদা হচ্ছে বিদ্যুত্। এছাড়াও আবর্জনা থেকে প্রাকৃতিক সার বা জৈবসার উত্পাদনের রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। প্লাস্টিক বা রাবার জাতীয় আবর্জনা থেকে রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা যায়। তাছাড়া উন্নত দেশগুলো আবর্জনা আমদানিও করছে। বাংলাদেশ প্রচুর আবর্জনা রপ্তানি করতে পারবে। তাই বর্জ্যকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপনা করতে পারলে পরিবেশ মারাত্মক দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে, অথনীতিও সমৃদ্ধ হবে।

n লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়