শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে!

আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:২৯

৯৪ বত্সর বয়সি মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নির্বাচিত হইয়াছেন ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা উমনো নামক রাজনৈতিক দল হইতে। একই দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দুর্নীতির মামলায় জর্জরিত হওয়ার পর মাহাতির বলিয়াছেন, ‘উমনো এখন আর উমনো আছে বলিয়া আমি মনে করি না। ইহা উমনো নাই, ইহা নাজিবদের দল। আমি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত আছি, যে দলটি দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। ইহা আমার জন্য খুবই লজ্জাকর।’ প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়া আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিধ্বনি শুনিতে পাই। ইহা কি সেই আওয়ামী লীগ, যেই আওয়ামী লীগের স্বপ্ন দেখিয়াছেন বঙ্গবন্ধু এবং তাহারই কন্যা শেখ হাসিনা? বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারক আওয়ামী লীগে এখন এমন সব লোক ঢুকিয়া পড়িয়াছে, তাহারা এমন সব কর্মকাণ্ড করিতেছে যে সরকারপ্রধানের কঠোর শ্রম, দেশ লইয়া উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সাফল্যগাথা সব ম্রিয়মাণ হইবার প্রয়াস পাইতেছে। অথচ এই সম্প্রদায় দুধের মাছি হইয়া বিগত দিনে দল হইতে দলে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে।

আমরা দেখিতে পাইতেছি, দেশের এই প্রান্ত হইতে অপর প্রান্তে সর্বত্র চুরি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, লুটপাট দিনে দিনে বাড়িয়াই চলিয়াছে। ইহা লইয়া সরকারপ্রধান স্বয়ং উদ্বেগও প্রকাশ করিয়াছেন। বিশেষ করিয়া, তরুণ-যুবক সম্প্রদায়ের একটি অংশ ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নাম লইয়া দলে ঢুকিয়া রীতিমতো তাণ্ডব চালাইতেছে। আর ইহাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা মিলিতেছে কিছু চিহ্নিত রাজনীতিবিদ নামক দুষ্টচক্রের মদদে। আমাদের এই দেশ একটি আধা সামন্তবাদী সমাজ দ্বারা পরিব্যাপ্ত। বাংলাদেশে একসময় ছিল বারো ভুঁইয়া। পাকিস্তানের শাসনকালে ছিল ২২ পরিবারের নিয়ন্ত্রণ। এখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে দেশে হাজার হাজার ভুঁইয়ার উদ্ভব হইয়াছে। তাহারাই এইসব তরুণ-যুবকদের পথভ্রষ্ট করিয়া চলিয়াছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ তাহারা দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের না ভাঙাইতেও কসুর করিতেছে না। ইহাদের ঔদ্ধত্যপনায় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ কোর্ট-কাচারিও অসহায় হইয়া পড়িয়াছে।

হইতে পারে দেশে কর্মসংস্থানের অভাব রহিয়াছে, সঠিক শিক্ষা হইতে অনেকে বঞ্চিত হইয়াছে; হইতে পারে অনেকেই কেবল একটি শিক্ষাগত সার্টিফিকেট লইয়া ঘুরিতেছে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার দেখা পায় নাই। তাই বলিয়া সমাজে অনাচারের মাত্রা এমন বাঁধ ভাঙিয়া যাইবে কেন? এই অবস্থা যদি এখনই রোধ করা না যায়, তাহা হইলে দেশের মানুষের মধ্যে আইন হাতে তুলিয়া লওয়ার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাইবে। অতএব এই দুষ্টচক্রের লাগাম এখনই টানিয়া ধরিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে গণতন্ত্রকে আমরা যদি নৈরাজ্য করিয়া তুলি, তাহা হইলে গণতন্ত্র শব্দটিই একদিন আমাদের নিকট হইতে বিতাড়িত হইবে। উল্লেখ করিতে হয় ব্রিটেনের  বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে লেখা একটি মন্তব্য। তিনি ইংরেজি ভাষায় যাহা লিখিয়াছেন তাহার ভাষান্তর হইল, ‘একজন অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী একজন অনির্বাচিত রানির অনুমোদন লইয়া নির্বাচিত ব্যাক্তিদের হাউজ অব কমন্স স্থগিত করিয়া দিয়াছেন।’ ইহা ব্রিটেনের রাজনীতির সংকটের পরিণতি।

আমরা লিখিয়া থাকি। কেহ যদি পড়েন, তাহাকে ভাবিতে হইবে। ভাবিতে হইবে আমাদের এই দেশ কোন দিকে ধাবিত হইতেছে। আমরা নিজেরাও হতাশার চূড়ান্তে পৌঁছাইয়াছি। কবি মধুসূদনের ভাষায় বলিতে হয়, ‘দাঁড়াও, পথিক-বর/ জন্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল!’