শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আর্ট গার্ডেন রোহিঙ্গা

যেখানে ফোটে রোহিঙ্গা তরুণদের গল্প-কবিতা

আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৪৮

ঠিক দুই বছর আগে জীবন বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসে বাংলাদেশে। এখানে আশ্রয় নেওয়া প্রতিটি মানুষের আছে আলাদা আলাদা গল্প, যার বেশিরভাগই দুঃসহ স্মৃতি। ‘আর্ট গার্ডেন রোহিঙ্গা’ নামে একটি ফেসবুক পেজে রোহিঙ্গা তরুণেরা নিজেদের কথা জানাচ্ছেন গল্প কিংবা কবিতার মাধ্যমে।

ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া এমনই একজন কবি রো এনামুল হাসান। রোহিঙ্গা হওয়ায় নিজ দেশেই এসএসসি পাসের পর লেখাপড়া করা অনুমতি পাননি তিনি। বরং বিতাড়িত হয়েছেন নিজ দেশ থেকে। আশ্রয়কেন্দ্রের ছোট্ট একটি ঘর এখন তার ঠিকানা। বললেন, ‘এই ঘরটা ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। আমার আর কোনো ঠিকানাও নেই।’ এসএসসি পাসের পর চাকরিতে যোগ দেননি এনামুল। সময় দিয়েছেন নিজেকে। পড়েছেন মিয়ানমারের লেখক কাউং থান্টসহ বিভিন্ন লেখকের বই। ২০১৫ সাল থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে তার পিতামহকে তারই চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করে টাটমাডো সেনাবাহিনী। তার চার চাচাকেও ধরে নিয়ে কারাবন্দি করা হয়। এই ঘটনা দারুণভাবে নাড়া দেয় তাকে। প্রতিবাদটা চলে আসে কলমের ডগায়। অবশেষে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের মুখে বাধ্য হয়ে নৌকায় নাফ পার হয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। তিনি একা নন, সঙ্গে আসে আরো সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা।

তিনি বলেন, ‘রাখাইন থেকে পালিয়ে যখন নাফের পাড়ে এলাম, তখন হঠাত্ করেই কাদায় ডেবে গেলাম। তখন কাদায় একটা কিছু আছে বলে মনে হলো। হাত দিয়ে ধরতেই বুঝলাম, ওটা একটা লাশ। মিয়ানমারে থাকার সময় ওরা বল তো আমরা বাংলাদেশি, ওদের দেশের আশ্রয় নিয়ে থাকছি। বাংলাদেশেও থাকছি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হয়ে। তাহলে আমরা আসলে কোথাকার? প্রতিদিন এই একটা কথাই চিন্তা করি। আসলে আমাদের কোনো দাম নেই সমাজে। পৃথিবী আমাদেরকে দাম দেয় না।’

কবিতাকে নিজেদের মত প্রকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম মনে করেন এনামুল। ক্যাম্পে তিনি ছাড়াও আরো অনেক রোহিঙ্গা তরুণ কবিতা লেখে। তাদের দিকনির্দেশনা দেন মায়ু আলী।

গত মার্চ মাসে ‘আর্ট গার্ডেন রোহিঙ্গা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেন মায়ু আলী। সেখানে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পের প্রায় ১৫০ জন রোহিঙ্গা কবিদের লেখা কবিতা প্রকাশ করা হয়েছে। ক্যাম্পের রোহিঙ্গা তরুণদের লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন মায়ু আলী। গত দুই বছর ধরে তাদের ভেতর জমতে থাকা রাগ, ঘৃণা, বিরক্তি প্রকাশের পথ হিসেবেই তার এই পদক্ষেপ নেওয়া। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে অনেক কিছুই হয়। আমি সেগুলো নিয়ে চিন্তিত। আমি কখনোই চাই না, এই তরুণরা হাতে ছুরি কিংবা অস্ত্র তুলে নিক। বরং আমি তাদের সাহিত্য, কবিতা ও শিল্পে ব্যস্ত রাখতে চাই। আমি চাই তারা শান্তির পথে হাঁটুক, সংঘাত কিংবা আঁধারের পথে নয়।’ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন