শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঝিলপাড় বস্তি ঘিরে ছিল মাসে অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য

আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪০

রূপনগরে পুড়ে যাওয়া ঝিলপাড় বস্তি ঘিরে মাসে অন্তত অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য ছিল। ক্ষমতাসীনদের দখলেই ছিল ঐ বস্তিটি। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অর্ধশত নেতা এ বস্তিটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সঙ্গে ছিল মাদক ব্যবসাও। গতকাল রবিবার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া বস্তির লোকজনকে সিটি করপোরেশন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। আশপাশের স্কুলে তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আপাতত আশপাশের স্কুল-কলেজগুলোতে তাদের থাকতে দিয়েছি। প্রতিদিন খাবার দেওয়া হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এটা করছে।’ এ বস্তিবাসীদের কীভাবে পুনর্বাসন করা হবে, জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের জন্য ২০১৭ সালে বাউনিয়া বাঁধে জায়গা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ইতিমধ্যে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। এখানকার ১০ হাজার পরিবারকে পর্যায়ক্রমে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যাদের ঠিকানা বস্তি, শুধু তাদেরই বাউনিয়া বাঁধে জায়গা দেওয়া হবে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।’   

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালে রূপনগর থানার পেছনের ঐ ঝিলের ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। তখন স্থানীয়রা এই নিচু জমিতে ময়লা ফেলতে শুরু করে। এতে ঝিলটি ভরে যায়। এরপর কাঠের পাটাতন দিয়ে বস্তিঘর গড়ে উঠতে শুরু করে। ২০০০ সালে পুরো জমি বস্তিতে ভরে যায়। শুরুর দিকে যারা বস্তিতে ছিলেন, তারা নিজেরা থাকার পাশাপাশি ঘর তুলে ভাড়া দিতে থাকেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতা-কর্মী বস্তির নিয়ন্ত্রণ নেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঘর তুলে ভাড়া দিতে শুরু করেন। তারা বস্তিতে অবৈধভাবে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে প্রতিটি ঘর থেকে দুই হাজার টাকা করে আদায় করছিলেন।

বস্তির বাসিন্দা নাসির মিয়া বলেন, ‘আমি হেলাল মিয়ার কেয়ারটেকার ছিলাম। তার ৩০টি ঘর আছে। এ ঘরগুলো থেকে আমি টাকা তুলে তাকে দিতাম। এর বিনিময়ে তিনি আমাকে থাকতে দিয়েছেন, আর প্রতিদিন এক-দেড়শ টাকা দিতেন। এভাবেই আমি চলেছি। আমার সবকিছু পুড়ে গেছে। ঈদের আগে ১১ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাট কিনেছিলাম, সেটাও শেষ। কাপড়, টিভি সব কিছু শেষ। এখন আমার কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন সরকার খাবার দিচ্ছে, কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। এ দিয়েই আমাদের দিন পার হচ্ছে। সরকার আমাদের যেখানেই থাকতে দিক সেখানে আমরা যাব। আমরা সরকারের কাছে থাকার জায়গা চাই।’