মো. আতিকুর রহমান নাহিয়া। তিনি ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। জানাচ্ছেন— এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
বাং লা পরীক্ষায় ভালো করতে প্রথমেই প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতা। আপনি যদি সাহিত্যমানের ভাষায় উত্তর দেন তাহলে অন্যদের থেকে বেশি নম্বর পাবেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো উপস্থাপনা। আপনি প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিচ্ছেন কিন্তু উপস্থাপনা সুন্দর না তাহলে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়বেন। আমি খাতাটি নান্দনিক করার জন্য কোটেশান এবং টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে কালোর পাশাপাশি নীল কালি ব্যবহার করেছিলাম। তৃতীয়ত, হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে এমন নয়, তবে অবশ্যই পঠনযোগ্য অর্থাত্ পরিষ্কার হতে হবে। চতুর্থত, প্রথমেই ভালো ইম্প্রেশন তৈরি করুন। প্রতিটা উত্তর সাহিত্যগুণ সম্পন্ন একটা লাইন বা প্রাসঙ্গিক উক্তি দিয়ে এমনভাবে শুরু করবেন যাতে পরীক্ষক মুগ্ধ হন। পঞ্চমত, প্রতিটা প্রশ্নের জন্য টাইম নির্দিষ্ট করে যাবেন এবং ঐ সময়ের মধ্যেই শেষ করবেন।
বাংলা প্রথম পত্রে ব্যাকরণ অংশে সহজেই প্রায় সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। ৯/১০ এর বাংলা ব্যাকরণ বইটি পড়বেন। বানান নিয়ে কনফিউশান তৈরি হলে বাংলা একাডেমির ডিকশনারি অনুসরণ করুন। প্রবাদ প্রবচনের নিহিতার্থ প্রকাশ অংশে কিছু আনকমন প্রবাদ আসে। এজন্য বাজারে যতগুলো বই আছে সবগুলোর প্রবাদ প্রবচন অংশটি কালেক্ট করে পড়ে যাবেন। হায়াত্ মামুদ ও সমর চন্দ্র পাল স্যারের বই দুইটি দেখতে ভুলবেন না।
ভাবসম্প্রসারণ বা সারাংশ পড়ে কমন ফেলানোর চেষ্টা করাটা বোকামি। ভাষাজ্ঞান আর কমনসেন্স ব্যবহার করেই এই দুই পার্টে ভালো করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক উক্তি এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন থেকে উদাহরণ দিতে পারেন। ভাবসম্প্রসারণ লেখার ক্ষেত্রে অনেকেই একই লাইনের রিপিটেশন করেন, এইদিকে সতর্কতা অবলম্বন করুন। সারাংশ বা সারমর্ম কোনোভাবেই ৫ লাইনের বেশি হবে না পারলে আরো ছোটো (৩/৪ লাইন) করুন। পদ্যাংশ বা গদ্যাংশটুকু বারবার পড়ে নিজের মাথায় সম্পূর্ণ লেখাটি সাজিয়ে তারপর খাতায় উত্তর করুন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্ন এককথায় উত্তর করবেন না। সাহিত্য অংশে ভালো করার জন্য প্রফেশনাল (বাংলা) ক্যাডারদের সিলেবাসটা কাছে রাখুন, ঐখানে উল্লেখিত টপিকগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রে প্রথমেই আছে অনুবাদ। তবে আক্ষরিক অনুবাদ করবেন না, ভাবানুবাদ করুন। এইখানে আপনার ভাষাগত দক্ষতা প্রকাশ করার সুযোগ কাজে লাগান। সংলাপ এর ক্ষেত্রে আমি স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর টেকনিক ফলো করে সময়, স্থান উল্লেখ করেছি। সংলাপ এর জন্য সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। এজন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় পড়া আর টিভির টক শো দেখা যেতে পারে। পত্র লিখনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফরম্যাট। এই অংশে কাটা ছেঁড়া না করা ভালো। বাম পাশের পাতা থেকে লেখা শুরু করবেন।
গ্রন্থ সমালোচনা লিখতে গিয়ে অনেকেই গাইড বই অনুসরণ করে বুক সামারি লিখেন। বুক সামারি আর বুক রিভিউ এক বিষয় নয়। আপনি মূলত বইটি মূল থিম, নামকরণ, চরিত্র বিশ্লেষণ, শক্তিশালী দিক, দুর্বল দিক, লেখাটির প্রকাশকালীন সময়ের সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা, বর্তমানেও কেন গ্রন্থটির পাঠ গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোপরি লেখকের অন্তর্নিহিত দর্শনগত দিকটা ফোকাস করুন। পত্রিকা বা সাহিত্য সাময়িকীতে গ্রন্থ সমালোচনা ছাপা হলে যেমন শিরোনাম থাকে তেমন একটা শিরোনাম দিন। যেমন— ‘ঘরে বাইরে: শ্রেয় বনাম প্রেয়’।
সর্বশেষ কথা, কোনো অবস্থায় প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না। প্রশ্ন কমন না পড়লেও বানিয়ে লেখার দক্ষতা অর্জন করুন। কোনো উত্তর অসমাপ্ত রেখে আসা যাবে না। ধরুন আপনি রচনা লিখছেন হাতে সময় আছে ১০ মিনিট। তাহলে আগে উপসংহারটা লিখে তারপরে বাকিটুকু লিখুন। সবাইকে শুভকামনা।