শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সহিংস ও উগ্রবাদ :উত্কণ্ঠা এবং উত্তরণ

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২১:৩৫

আব্দুজ জাহের নিশাদ

উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যে শুধু ধর্মীয় কারণে সৃষ্টি হয় তা নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেও সৃষ্টি হয় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সঠিক ও বাস্তব মতাদর্শে না এসে কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীকে ফাঁসানোর জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টির উদ্দেশ্য অন্ধ মতাদর্শের অনুসরণই হলো সহিংস উগ্রবাদ। এটি নিয়ে উত্কণ্ঠা এখন বিশ্বব্যাপী। যুক্তি পরাস্ত হচ্ছে এই অপশক্তির কাছে। বিশ্বায়নের এই যুগে লক্ষ করলেই দেখা যায় উগ্রবাদ রূপান্তরিত হয়েছে একধরনের সন্ত্রাসবাদে। একটি বিষয়ের রূপরেখা জানতে চাইলে তার গঠনমূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজন। তবে একশ্রেণির জনগোষ্ঠী এরা উগ্র মতবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে একজনের মতবাদকে অন্য জনের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর সন্ত্রাসবাদ বলতে গেলে একধরনের রাজনৈতিক সহিংসতাকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যক্তির উগ্র ইচ্ছার প্রয়োগই হলো সন্ত্রাসবাদ। এর কয়েকটি উপাদান হলো—ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল, মানবমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা ও রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ইত্যাদি। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদে রূপান্তরিত হয়। এজন্যই বলা হয়, সব উগ্রবাদী সন্ত্রাসী; কিন্তু সব সন্ত্রাসী উগ্রবাদী নয়। অর্থাত্ সন্ত্রাসের জনক হলো উগ্রবাদ।  ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বাহ্যত আফগানিস্তানের লড়াই ছিল রাজনৈতিক। আফগানিস্তানকে সোভিয়েত দখলমুক্ত করার লড়াই। তবে অনেক রাজনৈতিক লড়াইয়ে জঙ্গিবাদী রূপও আমরা দেখেছি। যেমনটি দেখেছি আলজেরিয়ার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট কিংবা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির মধ্যে। কালক্রমে এ উগ্রবাদ কেবল রাজনৈতিক মতবাদের ভিত্তিতে নয় বরং ধর্মীয় মতবাদের ভিত্তিতে এগিয়েছে। এমন পরিবর্তনও আমরা দেখি আফগান যুদ্ধে। আবার স্নায়ুযুদ্ধের সময় উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল গোটা বিশ্ব। যদিও এর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিকভাবে না হলেও মানবিক ভাবে সবাই অভিন্ন শীতল পতাকা তলে আশ্রয় নিবে; কিন্তু তেমনটি হয়ে ওঠেনি।

সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। যুব সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে এবং কেউ ভুল পথে থাকলে সঠিক পথে আসার জন্য উত্সাহিত করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য কোনো ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির মানুষের প্রতি সহিংস বা উগ্র আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক কাজে অংশগ্রহণ না করা এবং অন্যকে নিরুত্সাহিত। কারো প্রলোভনে আকৃষ্ট না হওয়া এবং অসাধু পন্থাকে না বলা, জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ নেওয়া ও অন্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। মোদ্দা কথা, সমাজের প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই পারে উগ্র, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী প্রতিরোধ প্রকল্পে সফলতা বয়ে আনতে। পরিবার সচেতনতাও এটি দমনে অধিক ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সবার সচেতনতা এবং সঠিক কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমেই উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব।

n লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়