শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষা অধিদপ্তর করছে কী

আপডেট : ২২ জুন ২০১৯, ২১:৫৮

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে নীতিমালা জারি করে সরকার। এ নীতিমালা শিক্ষক ও  প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। অথচ শিক্ষকরা এ নীতিমালা না মেনে পুরোদমে প্রাইভেট টিউশনিতে ব্যস্ত। তাহলে মাউশি কী করছে ?

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, শুধু কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা নয়, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যে বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া দরকার তা করছে না মাউশি। মাঠপর্যায়ের চিত্র বিশ্লেষণে বলা যায়, স্কুল-কলেজে নেই কোনো মনিটরিং। স্কুল-কলেজগুলোতে কী হচ্ছে তা জানেন না মাউশির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যেন গাছাড়া ভাব।

অথচ মাউশির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে রয়েছে কার্যালয়। রয়েছে ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ও যেখানে পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। এসব কার্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ছাড়াও আছেন মনিটরিং কর্মকর্তা। কিন্তু কোনো মনিটরিং নেই।   দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একাধিক বিধিমালা করা হয়েছে। এ  বিধিমালা ঠিকমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। কিন্তু মাউশি কি তার এসব দায়িত্ব পালন করছে— এমন প্রশ্ন অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের।

রাজধানীর মণিপুর স্কুলের এক অভিভাবক জানান, স্কুলটির বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোদমে বাধ্যতামূলক কোচিং করানো হচ্ছে। কোচিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা তুলে শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। অথচ সরকারের নীতি অনুযায়ী কোনো স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলক কোচিং করা যাবে না। মণিপুর স্কুল নয়, দেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজের একই চিত্র। মাউশি এ বাধ্যতামূলক কোচিং বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত বই পাঠ্য না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ দেশের স্কুল-কলেজে সহপাঠ নিয়ে চলছে বাণিজ্য। নোট গাইড ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে ঘুষ দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সহপাঠ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছেন। ফলে বাড়তি দামে বই কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। গোপনে নয়, এটা প্রকাশ্যেই চলছে।

চলতি বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, এসব ভর্তি বেশিরভাগ টাকার বিনিময়ে হয়েছে। এ অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য চলে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজসহ নামি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অবৈধভাবে ভর্তি বাণিজ্য চলছে। এ অবৈধ ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়ে মাউশি কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখছে না। একটি তদন্ত কমিটি করে দায়িত্ব শেষ করছে।

শিক্ষকদের ভোগান্তি কমাতে এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ করে সরকার। কিন্তু দুর্নীতি কমাতে গিয়ে আরো বেড়েছে। চার থেকে পাঁচ স্তরের কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যার বেশিরভাগই মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, প্রথমে স্কুল থেকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করতে হয় ঘুষ দিয়ে। এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিসারকে ঘুষ দিতে হয়। উপপরিচালক পর্যন্ত এই অনৈতিক সুবিধা দিতে হয়। প্রতি স্তরে ঘুষ দিতে হয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি শিক্ষকের এমপিওতে মোট ঘুষ দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। মাউশির কাছে এমন অভিযোগ আসছে প্রতিনিয়ত। তাহলে মাউশি কার্যকর কেন ভূমিকা রাখছে না। অভিযুক্ত কতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

দেশের স্কুল-কলেজে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি, ভর্তি ফি নির্ধারণ করছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগও করছেন কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। আবার ব্যয়েও কোনো স্বচ্ছতা নেই।

মাউশির প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেন, মাউশির উপজেলা পর্যন্ত নিজস্ব কর্মকর্তা আছেন। আছে জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের অফিসও। মাউশির এসব কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা দরকার। কিন্তু তারা কতটা মনিটরিং করেন সেটা দেখা দরকার। শিক্ষকরা নিয়মনীতি না মানলে যেভাবে তাদের বিরুদ্ধে মাউশির মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে পারেন সেভাবে মাউশির মহাপরিচালক তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে তার বিরুদ্ধেও মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

মাউশির বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, কোচিং বাণিজ্য শতভাগ বন্ধ হয়নি। মাঠপর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম চলছে বলে দাবি করেন তিনি।