শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সমালোচনাতেও অনড় আইসিসি

আপডেট : ১২ জুন ২০১৯, ২১:২৩

প্রসঙ্গ রিজার্ভ ডে

শামীম হামিদ, ব্রিস্টল (ইংল্যান্ড) থেকে    

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলো এবারের আসরে। তাই গ্রুপ পর্বে রিজার্ভ ডে না রাখায় আইসিসির সমালোচনা চলছে। কিন্তু ক্রিকেটের বিশ্বসংস্থা এর ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন রিজার্ভ ডে রাখা হলে টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য বেড়ে এটি শেষ করা কঠিন হতো।

আইসিসি জানাচ্ছে যুক্তরাজ্যে গত বছরের জুনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র দুই মিলিমিটার। এ বছর দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে আটলান্টিক পারের এই দেশটিতে। গত সোমবার পূর্ব লন্ডন এলাকায় একদিনেই ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দফতর। বৃষ্টির রোষানলে পড়েছে বিশ্বকাপও। তাই গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচগুলোতে কোনো রিজার্ভ ডে না রাখায় অন্যদের মতোই ক্ষোভ ঝেরেছেন বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডসও। এরপরও আইসিসি এক বিবৃতি নিজেদের অবস্থানের পক্ষেই ব্যাখ্যা দিয়েছে।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কারসহ তিনটি ম্যাচ এ যাবত্ পণ্ড হয়েছে বৃষ্টির কারণে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলো এবার। এর আগে ১৯৯২ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে দুটি করে ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছিল। এছাড়াও চলতি আসরে একটি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে। তাই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে রিজার্ভ ডে না রাখার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন ক্রিকেট ভক্তরা। অবশ্য বিশ্বকাপে রিজার্ভ ডে রয়েছে। তবে তা সেমিফাইনাল থেকে।

একই প্রসঙ্গে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডসও। গত মঙ্গলবার বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হওয়ার পর তিনি ক্ষোভ লুকিয়ে না রেখে বলেন, ‘আমরা চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারি কিন্তু বিশ্বকাপের মত বড় টুর্নামেন্টে রিজার্ভ ডে কেন রাখতে পারি না।’

ইংলিশ এই কোচের ক্ষোভটা বাড়াবাড়ি কিছু নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই বৃষ্টির জন্যই এক পয়েন্ট হারাতে হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে। তার মধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে আগামী ১৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচেও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

কোচ রোডস তাই হতাশায় পুড়ছেন। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইংলিশ আবহাওয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হবেই। কখন বৃষ্টি আসবে, কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সারা বিশ্ব থেকে লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করতেই থাকে যে বৃষ্টি কখন আসবে। আমি জানি না। তবে এই মুহূর্তে আমরা দেখছি সমস্যা হচ্ছে।’

আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ রিচার্ডসন প্রতিটি ম্যাচে রিজার্ভ ডে না রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে এক বিবৃতি দেন। তিনি এতে বলেন, ‘প্রতি ম্যাচে রিজার্ভ ডে থাকলে টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য অনেক বেড়ে যাবে। ফলে টুর্নামেন্ট সম্পন্ন করা খুব জটিল হয়ে পড়বে। ম্যাচের জন্য পিচ প্রস্তুত রাখা, টিমের প্রস্তুতি, এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াত, আবাসন, ভেন্যু, টুর্নামেন্টের স্টাফ সংগ্রহ করা, ভলান্টিয়ার ও ম্যাচ অফিসিয়াল পাওয়া, ব্রডকাস্ট সামগ্রী পরিবহনসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে।’

দর্শকদের কথাও ভাবছে আইসিসি। রিচার্ডসন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়বেন দর্শকরা যারা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে খেলা দেখতে আসেন। রিজার্ভ ডে’র দিনেও যে বৃষ্টি হবে না তারতো কোনো নিশ্চয়তা নেই। ব্রডকাস্ট, পরিবহনসহ নানা কাজে একটা ম্যাচে প্রায় ১২০০ জনের কাছাকাছি কর্মী জড়িত থাকেন। গ্রুপ পর্যায়ে রিজার্ভ ডে’র নিয়ম করা হলে কর্মী সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। গ্রুপ পর্যায়ে না থাকলেও নকআউট পর্যায়ে রিজার্ভ ডে রয়েছে।’

ডেভ রিচার্ডসন জানিয়েছেন, বৃষ্টি নামলে দ্রুত মাঠটিকে খেলার উপযোগী করার ব্যাপারে চেষ্টার কোনো কমতি করছে না আইসিসির কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো ম্যাচে বৃষ্টি শুরু হয় তখন ম্যাচ অফিসিয়াল ও গ্রাউন্ড স্টাফসহ ওই ভেন্যুর পুরো দল মাঠটিকে খেলার উপযুক্ত করে তুলতে কাজ শুরু করে। তারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যাতে অন্তত ওভার কমিয়ে হলেও একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমরা বিভিন্ন সময় ঘোষণা দিয়ে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের সাহায্যে মাঠে আসা দর্শকদের বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়ে আপডেট রাখার কাজ করি।’