শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুক্তিপণ না পেয়ে স্কুলছাত্রকে হত্যা করল একদল কিশোর

আপডেট : ০৩ জুন ২০১৯, ২২:২৮

পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে একদল কিশোর অপরাধী স্কুলছাত্র সালাউদ্দিনকে (১৩) হত্যার পর খালে ফেলে দেয়। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম প্যাট্রোল দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সালাহউদ্দিনকে অপহরণ ও পরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় তারা। কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা পান করিয়ে সালাউদ্দিনকে প্রথমে অজ্ঞান করা হয়। এরপর গলায় রশি পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। সালাহউদ্দিনকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত ৯ জন পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এসব কথা জানিয়েছে।

অপহরণের দুই দিন পর গতকাল সোমবার পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাটের উমেদপুর গ্রামের একটি ডোবা থেকে সালাহউদ্দিনের হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। সালাহউদ্দিনের লাশ উদ্ধারের আগে পুলিশ অপহরণের সঙ্গে যুক্ত নয়জনকে আটক করে যাদের বেশির ভাগই কিশোর। অপহরণের পরেই সালাউদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেছে। নিহত সালাহউদ্দিন পাড়েরহাট রাজলক্ষ্মী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে উমেদপুর গ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে সালাউদ্দিন শব-ই-কদর এর নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরে আসেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে ও মাইকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করেও তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে পরদিন রবিবার সকালে একটি মোবাইল থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সালাউদ্দিনের পরিবারের কাছে ফোন দেওয়া হয়। অপহরণের আলামত হিসাবে সালাউদ্দিনের পায়ের জুতা ও টর্চলাইট পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দ্রুত মুক্তিপণ দিতে চাপ দেওয়া হয়। পিতা সিদ্দিকের কাছ থেকে বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে মোবাইল ট্রাকিং এর মাধ্যমে স্থানীয় নয় কিশোর ও যুবককে আটক করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও অপহূত সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়া যায় নাই। সিদ্দিকুর রহমান জানান, অপহরণকারীদের কাছে তথ্য ছিল তার কাছে সদ্য বাড়ি বিক্রি করা ছয় লাখ টাকা রয়েছে এবং ঈদে পাড়েরহাট বাজারের পাশে নতুন বাড়িতে ওঠার প্রস্তুতি চলছিল।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে উমেদপুর খালের পাশে একটি ডোবা থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সালাহউদ্দিনের ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার করে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সালাউদ্দিনের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোল্লা আজাদ হোসেন সোমবার বিকালে পুলিশ অফিসে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে স্কুলছাত্র হত্যার ঘটনার বিববরণ দেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা বেশিরভাগই কিশোর এবং স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র। তারা হলো উমেদপুরের হায়দার শেখের ছেলে মো. সোহান (১৯), চর টগড়ার আব্দুর রব শেখের ছেলে মারুফ শেখ (১৫), মধ্য নামাজপুরের সোমেদ শেখের ছেলে মো. মাসুদ শেখ (১৪), উমেদপুরের মজিবরের ছেলে নাঈম (১৪), পাড়েরহাটের হাকিম হাওলাদারের ছেলে হাফিজুর (১৮), মোড়েলগঞ্জের তেতুলবাড়িয়ার আমজাদ মুন্সির ছেলে সাগর মুন্সী (১৮), পাঙ্গাসিয়ার জব্বার মোল্লার ছেলে বেল্লাল (১৪), পাঙ্গাশিয়া গ্রামের উত্তম সমদ্দারের ছেলে তন্ময় সমদ্দার (১৫) ও চর টগড়ার আশ্রাবের ছেলে বিকাশ এজেন্ট কবির শেখ (৪৫)।