বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যানকে তলব

‘চেয়ার ছেড়ে দিয়ে ব্যাংকের কেরানির চাকরি নিলেই হয়’

আপডেট : ২৩ মে ২০১৯, ২১:৪৮

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নামি-দামি ব্র্যান্ডের নিম্নমানের ৫২ পণ্য বাজার থেকে অপসারণ/জব্দের পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৬ জুন তাকে স্বশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে আদেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। 

সংস্থাটির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার থেকে একটি পণ্যও আপনারা রিমুভ (অপসারন) করেননি। এসিআই ও প্রাণের মত বড় বড় কোম্পানিকে ভয় পান? যদি ভয় পান তাহলে আপনাদের অফিস রাখার দরকার কি? ঘরে গিয়ে রান্না করেন, নইলে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে ব্যাংকের কেরানির চাকরি করতে বলেন। এসব পদ দখল করে রাখার দরকার কি?
 
নিম্নমানের ৫২ পণ্য বাজার থেকে অপসারণ/জব্দে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। 

আজ শুনানির শুরুতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কৌসুলি মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, পত্রিকায় এসব পণ্যের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। অনেকে পণ্য প্রত্যাহার করেছে। যারা করেনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাজার থেকে কোন পণ্য অপসারণে অভিযান পরিচালনা করেননি? আইনজীবী বলেন, আমাদের জনবল কম। মাত্র ১৭ জন। আদালত বলেন, আদেশ দিয়েছিলাম বাজার থেকে পণ্য অপসারণ করতে। কিন্তু আপনারা একটা মশলার প্যাকেটও অপসারণ করতে পারেননি কেন? তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেয়া পদক্ষেপে প্রশংসা করেছে আদালত। এই সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব পন্য জব্দ ও ধ্বংস করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

‘ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করেন’ 
হাইকোর্ট বলেন, বিএসটিআই কি করেছে সেটা দেখব না। আপনি (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) কি করেছেন সেটা বলুন। আমাদের ভদ্রতার একটা সীমা আছে। ভদ্রতা মানে কি দুর্বলতা সেটা মনে করছেন? আদেশ বাস্তবায়ন না করার জন্য আবার কাঠগড়ায় এনে দাড় করানোর সংস্কৃতি চালু করতে হবে? আমাদের টেম্পারমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করবেন না। 

‘হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন’
আইনজীবীর উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, আদালতের আদেশের প্রতি ন্যূনতম সম্মান দেখাতে পারলেন না। হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন। ল’ ইয়ারদের চালাকি আমরা বুঝি না? সোজা কথা না বলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা। এভাবে অজুহাত দেখিয়ে মূল বিষয় থেকে দৃষ্টি সরানো যাবে না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যা করেছে সেটা আইওয়াশ মাত্র। 

আরো পড়ুন : বিশ্বকাপে ২ দেশের প্রতিনিধত্ব করা চার ক্রিকেটার

‘মানুষকে কত রকমভাবে ঠকানো যায়’
এসিআইয়ের লবণ ও প্রাণের হলুদ গুড়া ও লাচ্ছা সেমাই নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, এই দুটি কোম্পানি দেশের বড় কোম্পানিগুলোর যে তালিকা রয়েছে সেখানে নাম রয়েছে। তাদের যদি হয় এই অবস্থা তাহলে মানুষ কোথায় যাবে। মানুষকে যে কত রকমভাবে ঠকানো যায় এসব ঘটনাই তার প্রমাণ। আদালত বলেন, ভেজাল বা নিম্নমানের পণ্যের মূল কথাই হচ্ছে মানুষ খেতে পারছে না। খেলে ক্যান্সার হবে। 

৯৩ পণ্যের রিপোর্ট দিতে হবে
বিএসটিআই ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলে ৫২টি পণ্য নিম্ন মানের উল্লেখ করে সংস্থাটি। বাকি ৯৩টি পণ্যের বিষয়টি পরীক্ষাধীন রয়েছে বলে জানানো হয়। রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ৯৩টি পণ্যের বিষয়ে রিপোর্ট দাখিল করা দরকার। পরে হাইকোর্ট ১৬ জুনের মধ্যে ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বিএসটিআইয়ের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়। 

আদেশ সংশোধন করেনি আদালত
আদেশ সংশোধনে কোম্পানিগুলোর আবেদনে সাড়া দেয়নি হাইকোর্ট। এসিআই, প্রাণ, সান চিপস কোম্পানিগুলো হাইকোর্টের আদেশ সংশোধনের জন্য আবেদন জানায়। আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করেনি। তবে এসব কোম্পানির নতুন উৎপাদিত পণ্যের ওপর পরীক্ষা করে ১৩ জুনের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট দাখিলের  জন্য বিএসটিআইকে বলা হয়েছে। আদালতে কোম্পানির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এমকে রহমান ও তানজীব উল আলম প্রমুখ শুনানি করেন।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। 

ইত্তেফাক/ইউবি/কেকে