মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যেভাবে এল বাংলা সন

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১৩

পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠার দিন। গ্রামীণ কৃষকসমাজের ঘরে ফসল তোলা আর খাজনা আদায়ের সূত্রেই এই বঙ্গাব্দের শুরু। মোগল সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা পায়। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর সম্রাট আকবর দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করে সিংহাসন লাভ করেন। তখন থেকেই রাজস্ব আদায়কে সহজ ও তাঁর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। প্রথমে এটি তারিখ-ই এলাহি নামে পরিচিতি লাভ করে এবং পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত পায়। সম্রাট ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রাজত্বের ঊনত্রিশতম বর্ষে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ নতুন এই সালটি তারিখ-ই এলাহি থেকে বঙ্গাব্দ হিসেবে পরিচিতি পায়। বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের ফলে বাংলায় এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। এর আগে মোগল সম্রাটরা রাজস্ব আদায়ের জন্য হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করতেন। কিন্তু এতে কৃষকরা সমস্যায় পড়ত। আবুল ফজল আকবরনামা গ্রন্থে বলেন, হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা কৃষকদের জন্য খুবই সমস্যার ছিল। কারণ চন্দ্র ও সৌরবর্ষের মধ্যে ১১ থেকে ১২ দিনের ব্যবধান ছিল, ফলে দেখা যায় ৩০ সৌরবর্ষ ৩১ চন্দ্রবর্ষের সমান ছিল। তখন কৃষকরা সৌরবর্ষ অনুযায়ী ফসল সংগ্রহ করত, কিন্তু চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হতো। ফলে এটি কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টের কারণ ছিল। তাই আকবর তাঁর রাজত্বের শুরু থেকেই দিন-তারিখ গণনার সুবিধার্থে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। এজন্য তাঁর জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি বর্ষপঞ্জি সংস্কার করে তা যুগোপযোগী করে তোলার দায়িত্ব অর্পণ করেন। বিজ্ঞানী শিরাজী ৯৬৩ হিজরি সালের শুরু থেকে বাংলা বর্ষ ৯৬৩ অব্দের সূচনা করেন। আরবি মুহাররম মাসের সঙ্গে বাংলা বৈশাখ মাসের সামঞ্জস্য থাকায় বাংলা অব্দে চৈত্রের পরিবর্তে বৈশাখকে প্রথম মাস করা হয়। চন্দ্রবর্ষ হয় ৩৫৪ দিনে, আর সৌরবর্ষ হয় ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ থেকে বাংলা মাসের বর্তমান নামসমূহ গৃহীত হয়েছে। যেমন :বৈশাখ—বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, জ্যৈষ্ঠ—জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আষাঢ়—উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে, শ্রাবণ—শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ভাদ্র—উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে, আশ্বিন—অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে, কার্তিক—কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, অগ্রহায়ণ (মার্গশীর্ষ) মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, পৌষ—পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, মাঘ—মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, ফাগুন—উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে, চৈত্র—চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে। বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন