শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিঠাপুকুরে যমুনেশ্বরীতে ভাঙন

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৩৬

ঝুঁকির মুখে বসতভিটা ফসলি জমি

মিঠাপুকুর (রংপুর) সংবাদদাতা

মিঠাপুকুরে যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙনের কবলে রয়েছে বসতভিটাসহ সহস্রাধিক একর ফসলি জমি। উঁচা বালুয়া এলাকায় প্রায় সাড়ে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধে ভাঙনের ফলে চরম দুঃচিন্তায় রয়েছে নদীর পাড়ে বসবাসকারীরা। এবারে বন্যায় শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক ইউপি সদস্য জানান, ‘রিলিফ চাই না, ভাঙন প্রতিরোধ চাই’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যমুনেশ্বরী নদীর বালুয়া মাসিমপুর, বড়বালা ও মিলনপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের উঁচা বালুয়া, মন্ডলপাড়া, বাগিচা পাড়া, ছড়ানের বাতা ও পাতাড়ি পাড়া গ্রাম। কয়েক বছরের মধ্যে ওই গ্রামগুলোর সহস্রাধিক একর ফসলি জমি ও বসতভিটা বিলীন হয়েছে নদীর বুকে। এবারে বন্যায় ওই এলাকাগুলোর সিংহভাগ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ইতোপূর্বে উঁচা বালুয়া এলাকায় ভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বছর খানেক সময় না পেরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে বাঁধে।

উঁচা বালুয়া গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, নদী ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে আমার বাড়িটি তিন বার সরিয়ে নিয়েছি। বসতভিটাসহ আবাদি জমিগুলো আস্তে আস্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বন্যার আগে চরম দুশ্চিন্তায় থাকি, কবে বাড়ি ভেঙে যায়।

পল্লী চিকিত্সক শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় এমপিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে নদী ভাঙনের বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগী শাহাবুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, তারিকুল ইসলাম, আমিন উদ্দিন, সুলতান মাহমুদ ও মবহুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বন্যা শুরুর আগেই দুশ্চিন্তায় থাকি, বাড়িটি কোথায় সরিয়ে নেব। নিশ্চিত ভাঙনের কবলে পড়ে কয়েক বছর থেকে নিঃস্ব হয়েছি। এবারে যাওয়ার কোনো জায়গা পাচ্ছি না। তারা ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কয়েক বছরের ভাঙনে বিলীন হয়েছে উঁচা বালুয়া এলাকার তিন শতাধিক একর ফসলি জমি ও বসত ভিটা। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আনিছার রহমান, আব্দুর রহমান, রাজা মিয়া, তাজগুল মিয়া, ফারুক হোসেন, বাবুল মিয়া ও আকমল হোসেন জানান, কতটা দুশ্চিন্তায় থাকি, সেটা আমরা ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না। ভাঙনের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে গিয়েছি। তারা শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি।

বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, এই এলাকাগুলোর প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন। তারা সরকারের কাছে রিলিফ চায় না, তারা চায় ভাঙন প্রতিরোধ। তিনি আরো বলেন, যাদের বাড়িঘর ও জমিজমা নদীতে ভেঙে গেছে, তারা ছাড়া এই কষ্ট কেউ অনুভব করতে পারবে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন-অর রশীদ বলেন, যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আবারো ১৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে।