শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রামেক বহির্বিভাগে ‘পট কোম্পানি’র প্রতিনিধির দৌরাত্ম্যে অসহায় রোগীরা!

আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৯, ২১:১২

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে ‘পট কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ’দের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছে চিকিত্সা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। অভিযোগ উঠেছে, ‘পট কোম্পানি’র রিপ্রেজেন্টেটিভরা বহির্বিভাগের একশ্রেণির চিকিত্সক ভিজিট করে নিজের ‘পট’ লেখাচ্ছেন আর রোগীরা তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ওইসব ‘পট’ খেয়ে রোগীদের কোনো উপকার হচ্ছে না। নামী ও বেনামী অনেক কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ শুধু অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বহির্বিভাগের একশ্রেণির চিকিত্সকদের দিয়ে ফুড সাপ্লিমেন্ট লিখিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ওইসব ফুড সাপ্লিমেন্টে রোগীদের রোগ নিরাময় হচ্ছে না বলে জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে ‘পট কোম্পানি’র রিপ্রেজেন্টেটিভরা চিকিত্সক ভিজিট করে তাদের পট লেখার ব্যাপারে চিকিত্সকদের উত্সাহিত করছে। বিভিন্নভাবে নিজেদের পটের গুণাগুণও তুলে ধরেন তারা। এসব রিপ্রেজেন্টেটিভরা বিভিন্ন ধরণের ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে বহির্বিভাগে প্রবেশ করেন। হাসপাতালের বেশ কিছু চিকিত্সক এসব রিপ্রেজেন্টেটিভদের কথায় রোগীকে পৃথক স্লিপে ‘পট’ লিখে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বহির্বিভাগের সব চিকিত্সকই ‘পট’ লেখেন না। একশ্রেণির চিকিত্সক ওইসব পট লিখে থাকেন। যা কিনতে শুধু রোগীদের টাকা খরচ হয়। কিন্তু রোগীরা নিরাময় হয় না। তবে ওইসব পটের দামও প্রচুর। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা এমনকি ৭০০ টাকা দামেরও পট রয়েছে। ওইসব পট শুধু রোগীদের কেনাই হয়। তাদের কোনো উপকারে আসেনা।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেসব ‘পট কোম্পানি’র পণ্য কিছু চিকিত্সক লিখেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জেবায়েন্ট, ম্যাক্সভিট, লাম্বার, স্পাইরোসহ আরো বেশ কয়েকটি।

হাসপাতাল বহির্বিভাগের বেশ কিছু চিকিত্সক পট লেখেন। বহির্বিভাগে চিকিত্সা নিতে আসা রাহেমা নামের এক রোগী বলেন, তিনি চিকিত্সা করাতে এসেছিলেন। ডাক্তার দেখানোর পরে অন্যান্য ওষুধের সাথে একটি পটও লিখে দেন। ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গেলে টাকা কম হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কর্মচারী বলেন, মা এটা নিতে হবে না। না নিলেও হবে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন না নিলে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মচারী জানান, এটা পট। খেলেও হবে, না খেলেও হবে।

আরেক রোগী কুলসুমও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তার ব্যবস্থাপত্রেও পট লিখে দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি জানার পরে তিনি সেটি কিনেননি। ওইসব পট কোম্পানীর প্রতিনিধিরা চিকিত্সকদের উপঢৌকন দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগে জানা গেছে। শুধু তাই নয় পটের দামের তিন ভাগের একভাগ সংশ্লিষ্ট চিকিত্সককে দেওয়া হয় বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তবে পট লিখে উপঢৌকন নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বহির্বিভাগের এক চিকিত্সক। পটের রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। পট কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হাসপাতাল পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন চিকিত্সা নিতে আসা রোগীরা।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সরকারি মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি তার সরকারি মোবাইল রিসিভ করেন নি। এ ছাড়া হাসপাতালের উপ-পরিচালক বিধান চন্দ্র ঘোষের ব্যক্তিগত মোবাইলেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনিও মোবাইল রিসিভ করেননি।