শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এবার অশান্ত হচ্ছে আলজেরিয়া

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৯, ২২:১৯

তৌহিদ আজিজ

 

আলজেরিয়ায় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থামছে না। গত কয়েকদিন ধরে সেখানে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর সামনের নির্বাচনে অংশ নিবেন না। এক ঘোষণায় তিনি বলেন, নিজের পঞ্চম মেয়াদের জন্য তিনি আর নির্বাচনে লড়বেন না। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণার পরও শান্ত হচ্ছে না আলজেরিয়া পরিস্থিতি। বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সরকার ব্যবস্থায় জরুরি পরিবর্তন চান। আর এ জন্য আবদেল আজিজের শাসন ব্যবস্থার সমাপ্তি টানতে হবে।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থেকে প্রেসিডেন্ট দেশকে অচল করে দিয়েছেন। তাই এখন আর তার ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। তাকে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আর যতদিন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না ততদিন পর্যন্ত তাদের রাজপথের আন্দোলন চলবে। তারা বলেন, ৮২ বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট এখন দেশ চালানোর মতো অবস্থায় নেই। তার সময়ে দেশ অর্থনীতিতে পর্যুদস্তু হয়েছে। দেশ একেবারে খাদের কিনারে এসে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি যখন এমন তখন প্রেসিডেন্ট তার নির্বাচনের অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে তিনি নির্বাচনের তারিখও পিছিয়ে দেন। আগামী মাসের ১৮ তারিখে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এটি চলতি বছরের শেষের দিকে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও আলজেরিয়া পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। লাল, নীল, সাদা পতাকা হাতে নিয়ে তারা বিক্ষোভে সমবেত হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছে, এই প্রেসিডেন্টের সময়ে দেশে অলিখিতভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। তার ২০ বছরের শাসনামলে দেশের মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙে গেছে। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রেসিডেন্টের চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

আন্দোলনকারীরা আরো বলছেন, প্রেসিডেন্ট (৮২) এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ২০১৩ সালে স্ট্রোক করার পর কার্যত তিনি এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তার মতোই দেশ এখন বার্ধক্যে ভুগছে। এতকিছুর পরও তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না বা অবসরে যাচ্ছেন না। উল্টো তিনি ভিতরে ভিতরে ক্ষমতা ধরে রাখারই ফন্দি-ফিকির আঁটছেন। তারা বলছেন, তিনি এখন বেঁচে থাকলেও মৃত। বলা যেতে পারে জীবন্মৃত (লিভিং ডেড)। তাই কি করে একজন ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ লোক দেশ চালাতে পারেন? সমালোচকরা বলছেন, একজন বয়স্ক অসুস্থ লোক কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে না। তিনি আসতে না পারলে তার পরিবর্তে অনুষ্ঠানস্থলে তার ছবি রেখে দেওয়া হয়। তার এই অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্যারিসে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বিবৃতি দিতে হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট এখনো জীবিত আছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট যদি তার দেশ চালানোর মতো অবস্থায় না থাকেন তাহলে এ কাজ কীভাবে সারা হচ্ছে? কেউ কেউ বলছেন, আলজেরিয়াকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হলেও ভিতরে ভিতরে কলকাঠি নাড়াচ্ছে অন্যরা। মূলত: একদল সামরিক কর্মকর্তা ও অনির্বাচিত ব্যবসায়ীরাই দেশ চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, নব্বই এর দশকে গৃহযুুদ্ধের মধ্য দিয়ে উত্থান হয়েছিল প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকার রাজত্ব। এরপর থেকেই ক্ষমতায় থাকার কৌশল হিসাবে সামরিক শক্তিকে যথেচ্ছভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক। এতে করেই তার সেখানে ভিত শক্ত হতে থাকে। আর এভাবেই দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকার স্বাদ গ্রহণ করছেন তিনি। তবে অন্য একটি সূত্রের দাবি, প্রেসিডেন্টের এই নাজুক অবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে বিরোধীরা। এ সুযোগে তারাও বিক্ষোভ-আন্দোলনকে পুঁজি করে নিজেদের ক্ষমতায় আসার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন