শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ের অন্দরমহল

আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৯

জামাল উদ্দীন

এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকালে আমাদের সকলেরই খাদ্য গ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু এই খাবার কিভাবে তৈরি ও পরিবেশন করা হয়ে থাকে তা সম্পর্কে খুব একটা জানার সুযোগ আমাদের হয়ে ওঠে না। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ফ্লাইটে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তার উপাদান, উপকরণ, রান্নার পদ্ধতি ও হাইজিন স্ট্যান্ডার্ড আমরা রেস্টুরেন্টে বা বাড়িতে যে খাবার খেয়ে থাকি তা থেকে অনেকটা ভিন্ন। যে উচ্চতায় ফ্লাইট চলাচল করে এবং উড়োজাহাজের কেবিনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের প্রভাবে খাবারে স্বাদ ও হজম ক্ষমতায় কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখেই তৈরি হয় ফ্লাইটে পরিবেশনকৃত খাবার।

বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর এয়ারলাইন্স হিসেবে স্বীকৃত এমিরেটস সম্প্রতি দুবাইয়ে বাংলাদেশি মিডিয়া প্রতিনিধিদলকে তাদের ফ্লাইট ক্যাটারিং পরিদর্শনের সুযোগ দেয়।

১,৬৩,২৫০ বর্গমিটার (১,৭৮৫টি ফুটবল মাঠের সমান) এলাকাজুড়ে অবস্থিত এমিরেটসের ফ্লাইট ক্যাটারিং, বিশ্বে এই জাতীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। স্থাপনাটি ভিজিট করার জন্য পূর্ব থেকেই অনুমতি নেওয়া ছিল। হাইজিনের স্বার্থে ভেতরে ঢোকার পূর্বেই সকলকে বিশেষ পোশাক ও জুতা পরিধান করে নিতে হয়। এত বিশাল একটি স্থাপনা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ঘুরে দেখা সম্ভব ছিল না, তদুপরি মূল অংশ ও কার্যক্রমগুলো আমাদের ঘুরে দেখানো হয়। ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ের স্টাফরা আমাদের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করেন।

স্থাপনাটিতে প্রসেসিং, কোল্ড চেইন, ফুড সেফটি, এনভায়রনমেন্ট এবং এনার্জি সেভিং সংক্রান্ত সর্বাধুনিক কনসেপ্ট অবলম্বন করা হয়েছে। খাবার তৈরিতে ব্যবহূত হচ্ছে অতি আধুনিক প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয় ইকুইপমেন্ট হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা। পরিবহনের সুবিধার্থে রয়েছে ২.৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মনোরেল কার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম। এখানে অনেককিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে, এমনকি খাবারের চিলিং (শীতলকরণ) ব্যবস্থাও। খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে রয়েছে ভ্যাকুয়াম ওয়েস্ট হ্যান্ডলিং পদ্ধতি।

অফলোড বে থেকে মিল কার্টগুলো মনোরেলের সাহায্যে ওয়ার ওয়াশ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর মিল কার্টগুলো খুলে ওয়াশ ও স্যানিটাইজিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। প্রতিদিন ২০ হাজারের অধিক মিলকার্ট, ৩ হাজার বারকার্ট এবং ১৪ হাজার স্ট্যান্ডার্ড ইউনিট কনটেইনার ব্যবহূত হয়। ৬শ’ মিটার ভ্যাকুয়াম ওয়েস্ট পাইপের সাহায্যে আবর্জনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় আবর্জনা কালেকশন এলাকায় জমা করা হয়।

এমিরেটসের আধুনিক এই ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ে ১১ হাজারের অধিক লোক কাজ করছেন, যার মধ্যে সেফের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮০০। সেফরা ১ হাজার ৫০০-এর অধিক মেন্যু তৈরি করে থাকেন।

এমিরেটস এবং অন্যান্য ১০৫টি এয়ারলাইন্স এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জের জন্য প্রতিদিন তৈরি হয় গড়ে ২ লক্ষ ২৫ হাজার মিল। গড়ে প্রতিদিন ৭০০ ফ্লাইটে খাবার সরবরাহ করা হয় এই কেন্দ্রটি থেকে।

বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রীদের খাদ্যাভ্যাস ও রুচি বিবেচনা করে এমিরেটস আঞ্চলিক থিমভিত্তিক মিল পরিবেশন করে থাকে। প্রতিমাসেই মেন্যুতে পরিবর্তন আনা হয় এবং রেসিপিগুলো পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উত্সব যেমন ক্রিস্টমাস, ঈদ অথবা কোনো দেশীয় উত্সব যেমন চান্দ্র নতুন বর্ষ ও অক্টোবর ফেস্ট উপলক্ষে এমিরেটস বিশেষ মিল পরিবেশন করে। যা উল্লেখ না করলেই নয় যে, শিশুসহ বিভিন্ন চাহিদার যাত্রীদের জন্য উপযোগী মিল তৈরি ও সরবরাহ করা হয়ে থাকে এমিরেটস ফ্লাইট ক্যাটারিং থেকে।

বিভিন্ন মিল তৈরিতে এমিরেটস ফ্লাইট ক্যাটারিং উচ্চমানসম্পন্ন এবং ফ্রেশ উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য বিশ্বজুড়ে এমিরেটসের রয়েছে অসংখ্য পার্টনার, যারা এগুলো সরবরাহ করে।

আপনি যদি এমিরেটসে ভ্রমণ করেন তবে তাদের ইনফ্লাইট বিনোদন ব্যবস্থা আইস-এ আপনার জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ফুড চ্যানেল। এই চ্যানেলটির মাধ্যমে সবার চোখের অন্তরালে কিভাবে ফ্লাইটের জন্য খাবার মেন্যু তৈরি করা হয় এবং এমিরেটস ফ্লাইট ক্যাটারিং কিভাবে বৈশ্বিক পার্টনারদের সঙ্গে কাজ করছে তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন।

পরিবেশ সংরক্ষণে এমিরেটস ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। প্রতিবছর ২১ টন অ্যালুমিনিয়াম রিসাইকেল করে সেন্টারটি। প্রতিমাসে এমিরেটস গড়ে ৩ টন প্লাস্টিক, ৯০ টন কার্ডবোর্ড, ৫ টন কাগজ রিসাইকেল করে। প্রতিবছর ৫৮ হাজার লিটার বর্জ্য তেল সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করার পর অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন