বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রকৌশলীদের জাতীয় কনভেনশন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ২১:৪২

১৯৪৮ সালের ৭ মে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। সেই সভাতেই ‘ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স পাকিস্তান’ নাম পরিবর্তন করে ‘ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ’ (আইইবি) নাম গ্রহণ করা হয়।

আইইবি-এর গঠনতন্ত্রে ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠার নানাবিধ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা লেখা আছে, প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে সেগুলোর অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে সংগঠনটির অর্জনও কম নয়। একবিংশ শতাব্দীতে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে প্রকৌশলীদের ‘সফলতায়’ আহ্লাদিত না হয়ে ব্যর্থতার দিকগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে।

আমাদের ভবিষ্যত্ অগ্রাধিকারমূলক কাজগুলো হতে পারে: প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সকল প্রকৌশলীকে আইইবি-এর ছত্রছায়ায় আনা, সার্বিকভাবে পর্যাপ্ত এবং উন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থার সংস্থান,  কেন্দ্র উপকেন্দ্রে কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা, আইইবিকে দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রভাবক ও নীতি সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।

‘উন্নত জগত্ গঠন করুন’ এ মিশন নিয়েই আইইবি’র জন্ম। ‘উন্নত জগত্’ গঠন করতে হলে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ভিত্তি বিংশ শতাব্দীতেই রচনা করেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরম উত্কর্ষের এ যুগে একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হবে গতিশীলতা এবং মজবুত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বুনিয়াদ। একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইনস্টিটিউশনকে অতীত ভুল, ব্যর্থতা ও অসম্পূর্ণতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত তা পুষিয়ে নিতে হবে এবং প্রকৌশলীদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ হাঁটি হাঁটি পা পা করে উন্নয়নের পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানাপড়েন, জ্বালানি ও বিদ্যুত্ শক্তির অপ্রতুলতা, দুর্নীতি, উন্নত প্রযুক্তি বিনিময় ও আত্তীকরণে পশ্চাদপদতা— এ সবই হচ্ছে আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে আইইবিকে একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকৌশলীদের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে ইনস্টিটিউশনের ভূমিকাকে আমরা যেভাবে দেখতে চাই তা হলো: প্রকৌশলীদের পেশাগত মান উন্নয়ন, দক্ষতা অর্জন ও বিকাশে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং “লার্নেড সোসাইটি কার্যক্রম” জোরদার করতে হবে; সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সমপর্যায়ের অন্যান্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে জাতীয় উন্নয়নে যৌথ অবদান রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে; গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে উত্সাহ প্রদান; অনলাইন ভোটিং সিস্টেমসহ সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজ্ড করার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সংস্থার পরবর্তী মেয়াদের নির্বাচনে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম্স প্রয়োগ; ইঞ্জিনিয়ার্স মোবিলিটি ফোরামের চূড়ান্ত সদস্যপদ লাভ এবং ওয়াশিংটন একর্ডভুক্ত হবার জন্য বিপিআরবি-এর প্রচেষ্টা জোরদারকরণ; ইএসবিবির কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ, উন্নত প্রযুক্তি আত্তীকরণের সহায়ক কারিকুলাম প্রণয়ন; প্রকৌশল শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ; প্রযুক্তি হস্তান্তর, বিনিময় এবং আত্তীকরণে সরকারকে সময়ে সময়ে এবং নিয়মিতভাবে কার্যকর পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদানের কার্যক্রম জোরদার করা; একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব জাতীয় প্রযুক্তি ও প্রকৌশল নীতি প্রণয়নে সরকারকে উদ্বুদ্ধকরণ; জ্বালানি নিরাপত্তা, জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানিসম্পদ উন্নয়ন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ‘জাতীয় উপদেষ্টার’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া; স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পরামর্শ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করতে হবে; ইনস্টিটিউশনের পেশাগত স্বাতন্ত্র্য অটুট রাখা; জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

বর্তমান শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রকৌশলীদেরকে প্রস্তুত করতে হলে ইনস্টিটিউশনকেই মুখ্য ও নিয়ামক ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। আমি মনে করি, তিনি এবং তাঁর সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। আমরা আইইবি’র ৫৯তম কনভেনশনের যে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি সেটি রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। আশা করি প্রকৌশলীদের এই জাতীয় কনভেনশন আমাদেরকে জাতীয় উন্নয়নে নেতৃত্বদানে প্রস্তুত হতে অনুপ্রাণিত করবে।

সমাজের অগ্রসর শ্রেণি হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন, উত্কর্ষ সাধন এবং আমাদের মনন ও মেধার সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবল সে দায়িত্ব পালনে সফল হওয়া সম্ভব, অন্য কোনো পন্থায় নয়। অন্য কথায় নিরঙ্কুশ পেশাগত আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতাই আমাদের মর্যাদা অর্জন এবং সার্বিক সাফল্য লাভের একমাত্র সোপান। উল্লেখ্য যে, গত ২ মার্চ থেকে রাজধানীতে প্রকৌশলীদের ৫৯তম জাতীয় কনভেনশন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই কনভেনশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

n লেখক : নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী সংগঠক