শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চকবাজারের মৃত্যুর শোক বইমেলাতে

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:৪৫

আসিফুর রহমান সাগর

সকাল থেকেই প্রভাত ফেরিতে আসা মানুষের স্রোত এসে মিশেছিল বইমেলা প্রাঙ্গণে। মহান ভাষা শহীদদের শুধু স্মরণ করা নয় তাদের আত্মদানকে সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের শক্তিতে পরিণত করার কথাও বললেন বইমেলায় আসা অনেক পাঠক। তবে সবার মুখে মুখে ফিরেছে চকবাজারে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা। মেলায় আসা মানুষরা শোক জানিয়েছেন চকবাজারে আগুনে পুড়ে মানুষের প্রতি, তাদের   পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান।

অমর একুশে স্মরণে বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই বইমেলা বাঙালির কাছে হয়ে উঠেছে একুশের সমার্থক। শহীদ বেদীতে ফুল অর্পণ আর বইমেলায় এসে বই কেনা যেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে সপরিবারে, ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে বড় ভাই-বোন বইমেলা প্রাঙ্গণকে ভরিয়ে তুলেছিলেন।

বাংলা ভাষার বর্তমান ও ভবিষ্যত্

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। বাংলা ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন ভাষাসংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস বহু অবদান ও পরম্পরায় ঋদ্ধ। এ নিয়ে সরলিকীকরণের কোনো সুযোগ নেই। এই ভাষা ও সাহিত্য যেমন প্রাচীন চর্যার ধারাবাহিকতায় পুষ্ট তেমনি মধ্যযুগের মুসলিম অবদানেও সমৃদ্ধ।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর পর বাংলা ভাষার ব্যবহারে আমরা ব্যাপক উত্সাহ দেখালেও এখনও সুচারুরূপে বাংলার ব্যবহারে পূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। আর অন্যদিকে আমাদের দেশে অনেক জনগোষ্ঠী আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, যদিও তাদের অনেকেই শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। এদের উত্তরপ্রজন্মের অবশ্যই তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার আছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের এ বিষয়ে সচেতনতা এবং স্পষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন।

সাড়ে তিন হাজার নতুন বই

বাংলা একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মেলার প্রথম ২১ দিনে এসে সবমিলিয়ে তিন হাজার ৩৬৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে গল্প ৫৪৭, উপন্যাস ৫১৩, প্রবন্ধ ১৯০, কবিতা এক হাজার ৭৫, গবেষণা ৫৩, ছড়া ৮১, শিশুসাহিত্য ৮৯, জীবনী ১১৭, রচনাবলি ৭, মুক্তিযুদ্ধ ৮৪, নাটক ৩১, বিজ্ঞান ৬১, ভ্রমণ ৬৯, ইতিহাস ৫৪, রাজনীতি ২৫, স্বাস্থ্য ২১, রম্য/ধাঁধা ২০, কম্পিউটার ৩, ধর্মীয় ১৫, অনুবাদ ২৮, অভিধান ৪, সায়েন্স ফিকশন ৩৭ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ২৩৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।

একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ জানায়, গতকাল একুশের মেলায় নতুন ৩৯৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ৫২টি, প্রবন্ধ ২৭টি, কবিতা ১৪৫টি, গবেষণা ৮টি, ছড়া ৮টি, শিশুসাহিত্য ৯টি, জীবনী ১৩টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১০টি, নাটক ৯টি, বিজ্ঞান ৮টি, ভ্রমণ ৭টি, ইতিহাস ৬টি, রাজনীতি ২টি, স্বাস্থ্য ১টি, অনুবাদ ৫টি, সায়েন্স ফিকশন ৪টি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে আরও ২৮টি বই এসেছে।