শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাতির নিচের অন্ধকার দূর হইবে কবে?

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৮

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে ২০১৭ সালে। তখন হইতে খোলা আকাশের নিচেই চলিতেছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অন্য সকল ভোগান্তি তো আছেই, তদুপরি ঝড়-বৃষ্টি ও রৌদ্রের বিড়ম্বনায় যখনতখন স্কুল ছুটি দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দুর্ভাবনার অন্ত নাই। সন্তানদের লইয়া কী করিবেন তাহার কোনো দিশা পাইতেছেন না তাহারা। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হইয়া পড়িতেছে। কমিতেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজম আলী বলিয়াছেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই ভবন নির্মাণ করা না গেলে পাঠদান অব্যাহত রাখা কঠিন হইয়া পড়িবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করিয়াছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিষয়টি জানেন। খুব একটা ভিন্ন নহে জয়পুরহাটের কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার অন্তত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্রও। উপজেলার পুর-কালিতলা থুপসারা, সড়াইল, একডালা, মূলগ্রাম, বেগুনগ্রাম, কাথাইল- গোপিনাথপুর, গঙ্গাদাসপুর ও শিব-সমুদ্রসহ প্রায় সর্বত্রই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগারের অভাবসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হইতেছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। এই তালিকা আরও দীর্ঘ করা যাইবে অনায়াসে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলির জরাজীর্ণ দশা লইয়া আমরা আগেও অনেক সম্পাদকীয় লিখিয়াছি। কিন্তু বাতির নিচের এই অন্ধকার দূরীভূত হয় নাই অদ্যাবধি।

ইহাকে বাতির নিচের অন্ধকার ছাড়া আর কীই-বা বলা যায়! গত এক দশকে বাংলাদেশ শুধু যে বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে তাহাই নহে, সমগ্র দেশজুড়িয়া চলিতেছে অভূতপূর্ব এক উন্নয়নযজ্ঞ— যাহা চর্মচক্ষেই দৃশ্যমান। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হইতেছে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প। সকল অর্থেই সারা দেশ যেখানে উন্নয়নের আলোয় উদ্ভাসিত, সেখানে সর্বপ্রকার উন্নয়নের ভিত্তি বলিয়া বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষাপরিবেশের এই হতশ্রীদশা মানিয়া লওয়া বাস্তবিকই খুব কঠিন। সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলের যে এই ব্যাপারে সদিচ্ছার কোনো অভাব নাই, তাহার ভূরি ভূরি প্রমাণ রহিয়াছে। টানা একদশক ধরিয়া বত্সরের প্রথম দিনই বিনামূল্যে পাঠ্যবই পাইতেছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে ব্যয় হইতেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৪) বাস্তবায়নে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করিতে হইবে সরকারকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ জন্য দুইটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করিতেছে। প্রথমত, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক অবকাঠামো নিশ্চিত করা। সেই অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় নূতন ভবন নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হইয়াছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কিত সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, গত এক দশকে হাতে নেওয়া হইয়াছে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ। তন্মধ্যে ১১ সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হইয়াছে। তাহা সত্ত্বেও প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলির এই করুণদশা কেন— সেই প্রশ্ন উঠিতেই পারে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনোভাবেই ইহার দায় এড়াইতে পারিবেন বলিয়া মনে হয় না।