শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফরিদপুর নদীবন্দর

নাব্য সংকটে ডুবোচরে আটকে আছে অর্ধশত নৌযান

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:৫৪

পদ্মা নদীতে নাব্য সংকট ও নদীর মাঝে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরে ফরিদপুর নৌ বন্দরমুখী পণ্যবাহী প্রায় অর্ধশত জাহাজ, কার্গো ও ট্রলার আটকা পড়েছে। গত প্রায় এক মাস যাবত্ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসার পর ফরিদপুরে নৌ বন্দরে নোঙর করার জন্য এসব নৌ যান অপেক্ষা করছে। কিন্তু পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত নাব্য না থাকায় তারা বন্দরে ভিড়তে পারছে না। দেশের বিভিন্ন বন্দর হতে নৌ পথে বোরো মৌসুমের সার, গম, সিমেন্ট, কয়লা, বালুসহ নানা পণ্য নিয়ে এসব নৌযান ফরিদপুর বন্দরের অদূরে গদাধরডাঙ্গিসহ চর ভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ ও জাকেরের সুরা এলাকায় পণ্যসমেত অবস্থান করছে।

এদিকে বন্দরের পল্টুন থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে হাজিগঞ্জে গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত্ নদীতে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এতে নৌপথের নতুন চ্যানেল সৃষ্টি হবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছে না কেউ।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে সাড়ে আটশ টন সার নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি জাকেরের সুরায় এসে আটকা পড়েছে এমভি মুগনি-১ নামে এমন একটি পণ্যবাহী কার্গো।

নৌযানের মাস্টার মোঃ সাহাবউদ্দিন জানান, বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে হলে যে পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন সেই পানি এখন নেই বলে আর এগোতে পারছেন না। তিনি বলেন, অন্ততপক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। এভাবে অরক্ষিত স্থানে পণ্যসহ কার্গো ভেড়ানোর ফলে তারা স্টাফসহ নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছেন। এখন পণ্য খালাসে নানারকম হয়রানি ছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।

রবিউল ইসলাম নামে আরেকটি জাহাজের একজন ইঞ্জিনম্যান জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাড়ে ১০ হাজার বস্তা সার নিয়ে এসেছেন। গত সাতদিন যাবত্ তিনি হাজিগঞ্জে আটকা পরেছেন। প্রতিদিনই তাদের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। এতে তাদের যেসব দিন নষ্ট হচ্ছে সে জন্য তো মালিক তাদের অতিরিক্ত টাকা দিবেন না। এখন এই হাজিগঞ্জ থেকে মাল খালাস করার চিন্তাভাবনা করছি।

ফরিদপুর নৌবন্দরে কর্মরত মোঃ খায়রুজ্জামান বলেন, বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ও কার্গো আসতে না পারায় ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখানকার কুলি শ্রমিকেরাও বেকার দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় আট হাজার কুলি শ্রমিক এই নৌবন্দর ঘিরে কাজ করেন বলে তিনি জানান। নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে আরো ড্রেজিং মেশিন বসানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া বন্দরটিতে দুটি পল্টুন তৈরির কাজ শুরু হলেও তা এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছেও বলে জানান তিনি।

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌ বন্দর। বছরের পাঁচ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকে বিধায় বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি গত একমাস যাবত্ পদ্মার বুকে যেই অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য বন্দরমুখী পণ্যবাহী প্রায় অর্ধশত জাহাজ ও কার্গো বিভিন্নস্থানে আটকা পরেছে। তিনি বলেন, ফরিদপুরের কুমার নদের উত্স মুখ খননে পদ্মার মদনখালী থেকে ৩শ কোটি টাকার যে খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেই প্রকল্পও কোনো কাজে আসবে না যদি না পদ্মার বুকে পানি না থাকে।

ফরিদপুরের নৌবন্দরের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান রিয়াজ আহমেদ শান্ত করপোরেশনের প্রতিনিধি নাফিজুল ইসলাম তাপস বলেন, আগে যেই দরে আমরা নদীর ঘাট ইজারা নিতাম, এখন বন্দর হওয়ার পর তার চেয়ে তিনগুণ বেশি দরে ইজারা নিচ্ছি। কিন্তু পানির স্বল্পতার জন্য বন্দরে নৌযান ভিড়তে না পারে তাহলে তো আমাদের লাভ তো দূরের কথা উল্টোপথে বসতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণ-তিনগুন ক্যারিং খরচ হচ্ছে। ডুবোচরে ও নাব্য সংকটে বন্দর থেকে ১০/১৫ কিলোমিটার দূরে নোঙর করে আছে। সেখান থেকে ছোট ছোট ট্রলারযোগে মাল বন্দর পর্যন্ত আনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, বন্দরটিকে সচল রাখতে নৌ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে জরিপ করেছে। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।

বন্দরের পোর্ট অফিসার শেখ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, নাব্য সংকট রয়েছে এটি ঠিক। তবে একেবারে যে নৌযান আসছে না তা নয়। ছোট কার্গো ও জাহাজ ভিড়ছে। নাব্য ফিরিয়ে আনতে একটি ড্রেজিং মেশিন কাজ করছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।