শুল্ক বিভাগের জব্দ করা স্বর্ণ কম টাকায় নিলামে তোলার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই চক্রের প্রধান খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন নিজেকে শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার (কাস্টমস কমিশনারের পিএস) বলে পরিচয় দিতেন। তিনি ৫/৭ বছর আগে জামালপুরের এক এমপির পিএস ছিলেন। ওই চাকরি ছাড়ার পর তিনি প্রতারণাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা।
তিনি জানান, গত বুধবার রাজধানীর রমনার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই সহকারীকে। তারা হলো- ইলিয়াস ওরফে নুর ইসলাম সরকার এবং সাইফুল ইসলাম। প্রতারণার কাজে এই দুইজন খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিনের পিএস বলে পরিচয় দিতো। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৮টি ভিজিটিং কার্ড, চারটি ব্যাংকের চেকের পাতা, সাতটি মোবাইল ফোনসেট ও ১৩টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতরা শুল্ক বিভাগের জব্দ করা সোনার বার কম টাকায় নিলামে দেয়ার কথা বলে অভিনব কায়দায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করেছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ব্যাংকে আটকে থাকা টাকা ছাড় করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার আগে তারা জাল কাগজপত্র তৈরি করতো। এর সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ চক্রের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মৃণাল নামের এক ভুক্তভোগী জানান, ওমর মবিন তাকে একদিন ফোন করে বলেন, কাস্টম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে যেসব সোনা জব্দ করেছে তা নিলামে বিক্রি করা হবে। মৃণাল ওই সোনা কিনতে রাজি থাকলে কমদামে তার কাছে এসব বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারবেন। পরে সোনা জব্দ সংক্রান্ত কাগজপত্র (ভুয়া) দেখিয়ে গত ৬ জানুয়ারি মৃণালের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নিয়েছে।
জান্নাত আরা বলেন, আসামি ওমর মবিনের মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপের মেসেজে ৪০ কোটি টাকার চেকের কপি ও অসংখ্য ফাঁকা চেকের কপি পাওয়া গেছে।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বড় বড় হোটেলে খাবার খেতে যেতো। যাতে, প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বুঝতে পারে এরা বড় মাপের মানুষ। তারা কখনও নিজেদের শুল্ক বিভাগের কমিশনার কখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত্ করেছে।