বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যে সুড়ঙ্গ বন্যা থেকে হংকংকে মুক্তি দিয়েছে

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২০, ২২:৩৮

হংকংয়ে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতের একটি বড় অংশই বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে হয়। তাই বৃষ্টিতে হংকংয়ে প্রবল বন্যা দেখা দেওয়ার কথা। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে হংকংয়ে বন্যার যে শঙ্কা ছিল, ২০১২ সালের পর তা অনেকটাই কেটে গেছে। হংকংকে বন্যা থেকে মুক্তি দিয়েছে একটি বিশেষ সুড়ঙ্গ। ঐ সুড়ঙ্গ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)। ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতেই মূলত বিশাল অর্থ খরচ করে ঐ সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে হংকং। প্রতি বছর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে যে বন্যার সৃষ্টি হতো, তা থেকে এখন অনেকটাই মুক্তি মিলেছে হংকংয়ের।

হংকংয়ের ড্রেনেজ সার্ভিস বিভাগ (ডিএসডি) তথ্য অনুযায়ী, ডাবল ডেকার বাসের চেয়ে উচ্চতর এই সুড়ঙ্গের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলে সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের নির্মাণকাজ। হংকংয়ে মোট বৃষ্টিপাতের ৮০ শতাংশই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে হয়। বৃষ্টির সেই পানি এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় সাগরে। সুড়ঙ্গের কয়েকটি পথ দিয়ে এসব পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। সুড়ঙ্গটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ওপরের দিক থেকে পানি নিচের দিকে সহজেই প্রবাহিত হতে পারে। সেটি গিয়ে যখন সাগরে পড়ে, তখন এই সুড়ঙ্গকেই একটি ছোটখাটো নদীর মতো মনে হয়।

এই বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করাটা এতটা সহজ বিষয় ছিল না। শহরের নিচ দিয়ে এত বড়ো একটি সুড়ঙ্গ নিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে। এই সুড়ঙ্গ তৈরির আগে সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকটাই নির্ভর করতে হতো আবহাওয়ার ওপর। বেশি বৃষ্টিপাত হলে সাধারণত গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। কিছু এলাকায় স্কুল কিংবা অফিস পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হতো। কিন্তু এই সুড়ঙ্গ তৈরির পর সেসব ঘটনা এখন যেন ইতিহাস। আগে প্রতি বছর বন্যার কারণে একদিকে যেমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটত, তেমনি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হতো এবং হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হতো। কিন্তু সুড়ঙ্গ তৈরির পর এসব ঝামেলা জাদুঘরে পাঠিয়েছে হংকং।

১৯৯৫ সালের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে একই সমান অর্থ খরচ হলেও তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। ঐ সময় পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ড্রেন, ৩৬০ কিলোমিটার নদী চ্যানেল, চারটি বড়ো আন্ডারগ্রাউন্ড সুড়ঙ্গ, বন্যার পানি সংগ্রাহক চারটি ট্যাংক তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়নি। অথচ ২০১২ সালে তৈরি হওয়া বিশেষ ঐ সুড়ঙ্গ শহরের বৃষ্টির পানি নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করছে। শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেই থেমে থাকতে চায় না হংকংয়ের ড্রেনেজ সার্ভিস বিভাগ। ডিএসডির জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী লিইউং বলেন, ‘আমরা জানতাম জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। আর সেটার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতেই আমাদের এই প্রস্তুতি। ভবিষ্যতে তারা এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যার মাধ্যমে বৃষ্টির এই পানি দিয়ে জলবিদ্যুত্ উত্পাদন এবং শহরের মানুষের ব্যবহারযোগ্য করা যায়। —সিএনএন