শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভালো কোনো কোম্পানি আসেনি বাজারে

এক অর্থবছরে সর্বনিম্ন আইপিওর রেকর্ড

আপডেট : ০২ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৩

সদ্য বিদায় নেওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এসেছে। এক অর্থবছরে এটি সর্বনিম্ন আইপিও আসার রেকর্ড। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠলে গত বছরের এপ্রিলে নতুন আইপিও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

অবশ্য আইপিও কতটা এলো, সেটার চেয়ে বড় বিষয় কতটা মানসম্পন্ন আইপিও এলো। মানহীন আইপিও বেশি এলেও লাভ নেই বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ভালো আইপিও না আসার কারণে বাজারের গুণগত মান পরিবর্তন হয়নি। গত কয়েক বছরে নতুন শেয়ারও বাজারে আসেনি।

অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর দিক দেখলে দেখা যায় যে নতুন অর্থবছর থেকে ননলিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো বাজারে থাকতে বা নতুন কোম্পানি লিস্টেড হতে নিরুত্সাহিত হবে। তিনি বলেন, আস্তে আস্তে শেয়ারবাজার থেকে সব সুবিধা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তাহলে কোম্পানিগুলো কেন শেয়ারবাজারে আসবে? বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নতুন ও ভালো শেয়ার বাজারে আনার বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

বেশি আইপিও অনুমোদন দিতে বিএসইসি নতুন করে আইপিও দেওয়ার উদ্দেশ্যে জুলাই মাসে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়িয়ে পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর সংশোধন আনে বিএসইসি। এর পরও চলতে থাকে আইপিওর খরা। এর মধ্যেই দেখা দেয় মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। পরিবর্তন আসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতেও।

আগের কমিশনের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসির দায়িত্ব নেয় নতুন কমিশন। অবশ্য নতুন কমিশন আসার পর এখনো কোনো আইপিও অনুমোদন দেয়নি।

তথ্যে দেখা গেছে, বিএসইসি গত ১২ অর্থবছরে ১১৯টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাত্ বছরে গড়ে আইপিও দিয়েছে ১০টি। বিএসইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সবচেয়ে কম আইপিও দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত আইপিওর তথ্য দেওয়া আছে।

বিএসইসির এই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে চারটি। তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫টি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬টি আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া ১০১২-১৩ অর্থবছরে ১২টি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০টি, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৭টি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১২টি এবং ২০১৮-০৯ অর্থবছরে ৭টি আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে নতুন নতুন ভালো আইপিও আনার কোনো বিকল্প নেই। বাজারে যত ভালো কোম্পানি আসবে, বাজারের গভীরতা তত বাড়বে। কিন্তু দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া। সেই সঙ্গে আইপিওর অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা কমানো। তাহলে বাজার আরো গতিশীল হবে।