শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মালয়েশিয়াতে রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:২৬

গত সোমবার আচমকা পদত্যাগের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটাইয়া আলোড়ন তুলিয়া ফেলিয়াছেন মালয়েশিয়ার বয়োবৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। পদত্যাগ করিলেও নূতন সরকার গঠন না করা পর্যন্ত রাজার অনুরোধে তিনিই অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন। অধিকাংশ বিশ্লেষক এই ব্যাপারে একমত যে, ক্ষমতাসীন জোটের ভিতরকার দ্বন্দ্বের চাপে নয় বরং নূতন করিয়া এককভাবে ক্ষমতাশালী হইবার লক্ষ্যেই রাজনীতির এই জটিল চালটি চালিয়াছেন মাহাথির। এখন তিনি ঠিক কেমন করিয়া কতখানি জাল গুটাইতে পারেন তাহাই দেখিবার বিষয়।

স্মর্তব্য, ২০১৮ সালের শেষের দিকে একসময়কার সহকর্মী ও পরবর্তীকালের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সহিত পাকাতান হারপান নামক এক জোট বাঁধিয়া সরকার গঠন করেন মাহাথির। উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগ আনিয়া ইব্রাহিমকে এক দশক জেল খাটাইয়াছিলেন মাহাথির। কোনো দিন এই দুই জনের বিরোধ মিটিবার কথা কেহ চিন্তা না করিলেও, রাজনীতিতে সবকিছুই যে সম্ভব, তাহা প্রমাণ করিয়া দিয়া এই দুই জনে পাকাতান হারপান গঠন করেন। এই জোট প্রচণ্ড দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড মালায়াস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনকে (ইউএমএনএ) ক্ষমতা হইতে হটাইয়া দেওয়া। নির্বাচনি জোটকালে প্রথমে মাহাথির ও পরবর্তী সময়ে ইব্রাহিম প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করিবেন মর্মে রফা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে পদ ছাড়িয়া দিবার কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণায় মাহাথির ব্যর্থ হইলে, ইব্রাহিম শিবিরে অসন্তোষ ধূমায়িত হইতে থাকে। এইখানেই শেষ নহে। মাহাথিরের নিকটের লোকজনদিগকে কিছুদিন ধরিয়া রাজ্জাক শিবিরের সহিতও এক ধরনের কোমল সম্পর্ক রক্ষা করিতে দেখা যায়, যাহা স্বভাবতই ইব্রাহিম শিবিরকে অধিকতর নাখোশ করিয়া তুলে। এমতাবস্থাতে ইব্রাহিম কী করেন সেই দিকে পর্যবেক্ষকদিগের দৃষ্টি নিবন্ধ থাকিতে-থাকিতেই পদত্যাগকাণ্ড ঘটাইলেন মাহাথির। উল্লেখ্য, সরকার গঠন করিতে চাহিলে আইনসভার নিম্নকক্ষ দেওয়ান রাকায়াতের ২২২ জন সদস্যের মধ্যে ১১২ জনের সমর্থন আদায় করাই হইতেছে আসল কথা। মাহাথিরের ২০১৬ সালে গঠিত বারাসাতু পার্টির বর্তমান পার্লামেন্টে ২৬টি আসন রহিয়াছে। বাকি ৯৬টি আসন সংগ্রহের জন্য মাহাথির, ইব্রাহিম ও রাজ্জাক কেমন করিয়া কাহার সহিত রফার চেষ্টা করেন তাহাই হইতেছে এখন দেখিবার বিষয়।

একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মাহাথির আরেকবার নূতন করিয়া ইব্রাহিমকে জোটসঙ্গী করিয়া প্রধানমন্ত্রী পদের ভাগাভাগি করিতে চাহিবেন না। সেই ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজ্জাকের সহিত হয়তো কোনো একটি রফা করিতে চাহিতে পারেন। রাজ্জাকের দল ইউএমএনএর দেওয়ান রাকায়াতে ৫৪টি আসন রহিয়াছে। ইহা ছাড়া কট্টর ধর্মবাদী দল মালয়েশিয়াস ইসলামিক পার্টির (পিএএস) সহিত মাহাথির ক্ষমতার সম্পর্ক আগ বাড়াইতে পারেন বলিয়া মনে করা হইতেছে। কেহ কেহ মনে করিতেছেন নূতন সরকার ঘটনা জটিলতর হইতে থাকিলে, মালয়েশিয়াতে নূতন করিয়া একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও সম্ভাবনা রহিয়াছে। তেমন কিছু হইলেও মাহাথিরই যে প্রধানতম ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিরাজ করিবেন তাহাতে তেমন কোনো সন্দেহ নাই।