মাসুদ হাসান। ২২ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ক্রিকেট প্রশিক্ষকের কাজ করছেন। বর্তমানে প্রধান ক্রিকেট প্রশিক্ষক তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও বেশ পরিচিত মুখ। প্রায় দুই যুগের এই যাত্রায় অনেক ছাত্রের কারণেই প্রশংসাধন্য হয়েছেন তিনি। ছাত্রদের কীর্তির আলোয় আলোকিত হয়েছেন। এই বিকেএসপির ছাত্র সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, মুশফিকুর রহিমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত নাম।
তবে মাসুদ হাসানদের নিরলস পরিশ্রমের সবচেয়ে বড়ো স্বীকৃতিটা এনে দিয়েছে আকবর আলীর দল। চলতি মাসেই তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিশ্বজয়ী দলটার ৮ ক্রিকেটারই বিকেএসপির ছাত্র। আকবর-জয়দের বিশ্বসেরার মুকুটটা অলক্ষ্যে মাসুদ হাসানদের মাথায়ও শোভা পাচ্ছে। যার গৌরবে এই প্রশিক্ষকের চোখে-মুখে দোল খাচ্ছে ভুবনজয়ী হাসি। শুধু যুব ক্রিকেটে নয় সিনিয়র পর্যায়েও এই ক্রিকেটারদের সাফল্যের রথ অব্যাহত থাকুক, এমনটাই আশা মাসুদ হাসানের। তবে তার জন্য আকবরদের সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন। বিসিবির কাছে এটাই অভিজ্ঞ এই প্রশিক্ষকের চাওয়া। তার মতে, লক্ষ্যে অবিচল থাকলে, কক্ষচ্যুত না হলে আকবররা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার হতে পারবেন। শিষ্যদের মাঝে সেই সামর্থ্য দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
গতকাল বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশে খেলেছেন বিশ্বকাপ জয়ী দলের ছয় ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পর গতকালই প্রথমবার বিকেএসপিতে এসেছেন আকবররা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ছাত্রদের খেলা দেখতে সকালেই বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে হাজির হয়েছেন মাসুদ হাসান এবং তার বর্তমান ক্রিকেট বিভাগের ছাত্ররা। খেলা দেখার ফাঁকে পারভেজ হোসেন ইমন, শরীফুলদের নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
বিকেএসপির প্রবেশ মুখে আকবর-শামীমদের ছবি সংবলিত পোস্টার ঝোলানো হয়েছে। শিগগিরই নিজেদের কীর্তিমান ছাত্রদের সংবর্ধনা দেবে এই প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব জয়ীদের মাঝে অধিনায়ক আকবরকেই এগিয়ে রাখছেন মাসুদ হাসান।
গতকাল তিনি বলেছেন, ‘আকবর ভালো লেভেলের প্লেয়ার হবে আশা করি। মাহমুদুল হাসান জয়ের কথা যদি বলি তারও একটা ভালো ভবিষ্যত্ আছে।’ ক্রিকেটারর হিসেবে শামীম-জয়দের নাড়ি-নক্ষত্র সবচেয়ে ভালো জানেন মাসুদ হাসান। তিনি বলছিলেন, ‘শামীম হোসেন পাটোয়ারীর কথা বলি সেও ভালো। কিন্তু তার গাইডটা বেশি দরকার। মাহমুদুল হাসানকে যতটুকু গাইডলাইন দেওয়া দরকার তার চাইতে বেশি শামীমের দরকার।’
তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে, আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। এসব ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের পরবর্তী পর্যায় সম্পর্কে মাসুদ হাসানের পরামর্শ, ‘পার্থক্যটা যেখানে রয়েছে সেখানে কর্তৃপক্ষ বা আমরা যারা কোচ রয়েছি তাদের নজর দেওয়ার দরকার যে এটা কীভাবে কমানো যায়। এই পার্থক্যগুলো যদি আমরা দূর করতে পারি এর মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন, চার-পাঁচ জনতো টপ লেভেলে খেলবেই।’
ছাত্রদের মাধ্যমে নিজের কাজের স্বীকৃতি নিয়ে গতকাল মাসুদ হাসান বলেছেন, ‘কাজটা যিনি বা যারা কাজ করেছেন তাদের কাজটা সঠিক ছিল কি না ফলাফলই বলে দেয়। অর্থাত্ যুদ্ধের ফলাফলই বলে দেয়, কার কী রকম অবস্থান। ওদের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ওরা দেখিয়ে দিয়েছে বা মানুষ মেনে নিয়েছে যে বিকেএসপিতে ওরকম ধরনের কাজ করছে।’
তবে সাকিবের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার চেয়ে আকবরদের বিশ্বকাপ জয়কেই নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের বড়ো অর্জন মানছেন মাসুদ হাসান। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘এটা অনস্বীকার্য হয়তো সাকিবের বিষয়টা হলো গল্প করার মতো, আমার ছাত্র নাম্বার ওয়ান হয়েছে, র?্যাংকিংয়ে ওয়ান হওয়া। আর এটা একটা চ্যাম্পিয়ন, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন সে যে লেভেলেরই হোক না কেন। তার মানে বিশ্বের সেরা একটা দেশ। এটা লেভেল যদি ধরি অবশ্যই আনন্দের, গর্ব করার মতো একটা বিষয়। বিশ্বের এক নম্বর দল।’