শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল ব্যাহত

আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২৮

নৌপথে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশক চিহ্ন (বয়া-বিকন বাতি) না থাকায় ঘন কুয়াশায় মাঝ নদীতে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন নৌযান মাস্টার ও চালকেরা। জরুরি অবস্থায় মাঝ নদীতে ফগ লাইট জ্বালিয়ে নোঙর করে থাকতে হচ্ছে তাদের। এতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অপরদিকে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না যাত্রীবাহী নৌযানগুলো। ঘন কুয়াশায় অনুমান কিংবা ধারণার ওপর ভর করেই নৌযান পরিচালনা করছেন চালকেরা।

দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম চাঁদপুর নৌসীমানার ৭০০ কিলোমিটার নৌপথে বিকন বাতি ও বয়ার অভাবে নৌযানগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে। এতে প্রতিনিয়তই এই নৌপথে চলাচলকারী ৫০ লক্ষাধিক যাত্রী আতঙ্কের মধ্যে থাকছে। লঞ্চচালকেরা জানান, বরিশাল-ঢাকা, চাঁদরপুর-ঢাকা ও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলে ৬০টির বেশি। এছাড়া ষাটনল থেকে আজাদ বাজার, চাঁদপুর-হিজলা, চাঁদপুর-নন্দিরবাজার, চাঁদপুর-মাদারীপুর, চাঁদপুর-মাওয়াসহ বেশ কিছু ছোটো ছোটো শাখা নদী রয়েছে এর সঙ্গে। বয়া থাকলেও সেগুলোতে বাতি নেই এবং বিকনগুলোতে বাতি নেই। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে নৌযানগুলোকে।

নৌপথের চাঁদপুর অংশে প্রয়োজনের তুলনায় বয়া ও বিকন বাতি রয়েছে অনেক কম। তার মধ্যে আবার অনেকগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে আছে। এতে মহাবিপাকে পড়েন লঞ্চের সারেংরা। অনুমান কিংবা ধারণার ওপর ভর করেই নৌযান পরিচালনা করছেন চালকেরা।

নৌযান মাস্টার ও চালকেরা জানান, গভীর রাতে এবং ভোররাতে ঘন কুয়াশায় নৌযান চালাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। নদীতে দিকনির্দেশক বয়া-বাতি না থাকায় ঘন কুয়াশায় দিক হারিয়ে অনেক সময় মাঝ নদীতে নৌযান নোঙর করে রাখতে হয়। কুয়াশা কমলে আবার গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং গন্তব্যে যেতে বিলম্ব হয়। তারা নদীতে প্রয়োজনীয় বয়া-বাতি স্থাপনের দাবি জানান।

একাধিক লঞ্চের মাস্টাররা জানান, বরিশাল নৌবন্দরের পাশাপাশি নলবুনিয়া পন্টুন, মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া, মল্লিকপুর ও কালীগঞ্জ, বামনার চর থেকে লাল খয়রাবাদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, চাঁদপুরের শেওড়াবয়া বা মাঝের চর চ্যানেল, ভাসানচরসহ এসব এলাকার পার্শ্ববর্তী স্থানে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। ভাটার সময় পানি কমে গেলে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাই অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এর মধ্যে কালীগঞ্জে লাল ও গ্রিন বয়ার মাঝ বরাবর চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভাসানচরের মাঝ বরাবর পূর্বে বয়া থাকলেও বর্তমানে তা নেই এবং শ্যাওড়া এলাকায় বয়া প্রয়োজন।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের যুগ্ম-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিএর ৫৬টিসহ পায়রা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু বয়া রয়েছে। কিছু বয়া জেলেরা নষ্ট করে ফেলেছেন। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। এছাড়া বেশ কিছু স্থানে সম্প্রতি বয়া ও বিকন বাতি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশায় নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযানগুলোকে নোঙর করে রাখতে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে।

বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, মাঝ নদীতে ঘন কুয়াশায় লঞ্চ নোঙর না করে অধিকাংশ মাস্টার ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়। এছাড়া প্রায়ই ডুবোচরে আটকা পড়ে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নৌপথে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।  বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নদীবন্দরের উপপরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, ড্রেজিং কার্যক্রম চলামান রয়েছে। তবে অগ্রগতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এখনো কিছুই জানায়নি।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মিলন হাওলাদার জানান, বরিশালে শনিবার খালি চোখে কুয়াশার দৃষ্টিসীমা ছিল ১৫০০ মিটার। গতকাল দৃষ্টিসীমা ছিল আড়াই হাজার মিটার। তবে নদ-নদীতে ঘন কুয়াশা পড়ছে। বরিশালে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শনিবার ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রবিবার বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।