শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শে য়া র বা জা র

কোম্পানির অডিট রিপোর্টে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৫

এখন শেয়ারবাজার ম্যানিপুলেশনের অন্যতম হাতিয়ার হলো চার কোয়ার্টারের হিসাব বিবরণী দাখিল করার সিস্টেমটি। এর মধ্যে একটি, অর্থাত্ ফাইনাল বিবরণীটি ছাড়া বাকি তিনটিই আন-অডিটেড। আন-অডিটেড হিসাব বিবরণীগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই মনগড়া হয়। কোম্পানির মালিকরা নিজ পছন্দের অডিটরদের দিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে এ আন-অডিটেড হিসাব বিবরণীগুলো দাখিল করে। উদ্দেশ্য, বাজারে শেয়ারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। বাজারে নিজ কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেলার দরকার মনে করলে, ইপিএস কম দেখায়। দাম বাড়ানোর দরকার পড়লে ইপিএস বেশি দেখায়। মিথ্যা তথ্য দিলে কোনো জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই কারো কাছে। তাই দেখা যাচ্ছে, তিন কোয়ার্টার মিলিয়ে ইপিএস যেখানে ২.৪০ টাকা দেখানো হলো সেখানে ফাইনাল অর্থাত্ অডিটেড বিবরণীতে ইপিএস আসছে ১.৮০ টাকা। কেন এমন হলো, তারও রেডিমেড উত্তর আছে। বলা হয়, শেষ কোয়ার্টারে এসে ব্যবসা ভালো হয়নি, লস হয়েছে। তাই ফাইনাল ইপিএস কমে গেছে। অথচ, স্বাভাবিক কারণেই ঐ শেয়ারটির বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা ভেবে রেখেছিল, ফাইনাল ইপিএস অন্তত তিন টাকা হবে। আর সেই হিসাবে ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে।

এবারের বাজেট বক্তৃতায় একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ইপিএস এর ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড পে-আউট করলেই চলবে। অথচ, জরুরি পরিস্থিতি না হলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও কমপক্ষে ৬০:৪০ হয়। অর্থাত্, ইপিএস এর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ রিটেন্ড আর্নিং অর্থাত্ রিজার্ভে নেওয়া হয়। অনেক ভালো কোম্পানি এইটা মেইনটেন করলেও বেশির ভাগ কোম্পানি সেটাও মানছে না। কেউ কেউ ১-২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে, কেউবা তাও দিচ্ছে না।

সেক্ষেত্রে উপায় কী? প্রথমত, চারবার হিসাব বিবরণী না দিয়ে দুইবার দিলেই যথেষ্ট। আন-অডিটেড হাফ ইয়ারলি আর অডিটেড ফাইনাল। আগে তেমন ব্যবস্থাটি থাকলেও পরে বাজার খেলোয়াড়দের স্বার্থে, তা বাতিল করে চারবার করা হলো। ব্যাখ্যায় বলা হলো যে, বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির অবস্থা সর্বদা অবগত রাখার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাটি কোনো কাজে তো আসেইনি বরং শুরু থেকেই বাজার ম্যানুপুলেশনের হাতিয়ার হিসেবে এইটা ব্যবহার হচ্ছে। তাই আগের মতো একবার মাত্র হাফ ইয়ারলি আন-অডিটেড আর একবার অডিটেড ফাইনাল হিসাব বিবরণী দাখিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে মোটিভেটেড অর্থাত্ ইচ্ছাকৃত অপকর্ম বন্ধ হবে। যার মাধ্যমে বাজারে মানুষের আস্থা অনেকখানি ফেরত আসবে।

২) বর্তমান সময়ের মতো বাজার যখন কোনো কারণে দুর্বল হয়ে যায় তখন, ভালো ডিভিডেন্ড দিলে বাজার চাঙ্গা হয়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরত আসে। সেই বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী ১৩ জুন তারিখে প্রথম যখন বাজেট প্রস্তাব দিলেন, তখন সেই রকমই বললেন। অথচ ৩০ জুন চূড়ান্ত ভাবে বাজেট পাশের সময় সব উলটে পালটে গেল। এমনকি পরিপত্র জারি করে ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে ক্যাশ আর বোনাস দেওয়ার ব্যবস্থাটাও কার্যকর করা হলো না।

এখনো এইগুলোর বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। অবিলম্বে এসআরও জারি করে এগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব। এ বছরের জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর আর্থিক রিপোর্ট আর ডিভিডেন্ড দেওয়া তো প্রায় শেষ। প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি বাস্তবায়িত হলে ডিসেম্বরে ক্লোজ হওয়া ব্যাংক আর আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে যে- ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে, তা বলা যায়।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন