রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ছিল দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে ঐ টেস্টে কোচের প্রস্তাব দুই পেসার খেলানোর। তখন নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকা সাকিব আল হাসানের জোরাজুরিতে পেসারহীন একাদশ নিয়ে খেলতে নেমে আফগানদের কাছে হারের লজ্জা সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদেশের।
ইন্দোরে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশের নতজানু মুখ দেখে হয়তো নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি বাংলাদেশের হেড কোচ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, টেস্ট দলের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। তৃতীয় পেসার লাগবে। সেক্ষেত্রে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার টেস্ট দলেও চান তিনি। উইকেটে ভারতীয় পেসারদের দাপট দেখে এবং নিজের দলে চাইলেও আরেকজন পেসার রাখতে না পারার হতাশা স্পষ্ট ছিল ডমিঙ্গোর চোখে-মুখে।
শনিবার তিন দিনে ইন্দোর টেস্ট হারের পর কোচের প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য যদি আলাদা কাঠামো তৈরি করা যায়, তবে সেটি ইতিবাচক হবে বলেই মনে করেন তিনি। নতুন কিছু শুরু করলেও ফল পেতে সময় লাগবে বলছেন মুমিনুল।
টেস্ট দলের কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে হেড কোচের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের অধিনায়ক গতকাল বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যদি এমন সুযোগ-সুবিধা হয় কোচের সঙ্গে বসার, সেটা টেস্টে উন্নতি করার জন্য ভালো কাজে দিবে। যদি সেটা হয়, সঙ্গে সঙ্গে কিছু হবে না, সময় লাগবে। সেভাবে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে। আমার মনে হয় এটি একটি ইতিবাচক দিক।’
আরো পড়ুন: মানত দিতে গিয়ে খুঁজে পেলেন শিশু সন্তানের লাশ
টেস্টে উন্নতির জন্য এমন চিন্তা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। গতকাল মুমিনুল বলেছেন, ‘মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হলে সবসময় ভালো চিন্তা করতে হবে। টেস্ট ফরম্যাট আলাদা করে যদি কাঠামো তৈরি হয় তাহলে হয়তো সেটা বেশি কাজে দিবে। আপনি যখন একটা ফরম্যাট নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন সেখানেই থাকার চিন্তা করবেন। আপনার সহজাতভাবে সেই বিষয়গুলো মাথায় আসবে। সেভাবেই করা উচিত বলে আমার মনে হয়। তবে কিছুটা সময় লাগবে।’
নতুন নেতৃত্ব পেয়েছেন, এখনই বড়ো পরিবর্তনের পক্ষে বিস্তারিত বলতে নারাজ মুমিনুল। প্রয়োজনে কোচ, নির্বাচক, বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। মিডিয়ায় বিস্তারিত আলোচনায় আগ্রহী নন তিনি।
বেশি বেশি ম্যাচ খেললেই টেস্টে উন্নতি সম্ভব। তাই মুমিনুলের কণ্ঠেও গতকাল ধরা পড়ল আরো বেশি টেস্ট খেলার আকুতি। ওয়ানডে, টি-২০ তে ভালো করলেও টেস্টে কেন পারছেন না প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক গতকাল বলেছেন, ‘আমরা খুব বেশি টেস্ট খেলি না। আপনি যদি দেখেন গত সাত মাসে দুই টেস্ট খেলেছি। পর্যাপ্ত টেস্ট না খেলা একটা মূল কারণ।’
এখন ইন্দোরের বিবর্ণ পারফরম্যান্স ভুলে কলকাতায় অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় টেস্টের দিকে মনোযোগী হতে চায় বাংলাদেশ। ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ শুরু হবে ২২ নভেম্বর। মুমিনুল গতকাল বলেছেন, ‘আমরা এই ম্যাচ ভুলে পরেরটা নিয়ে ভাবতে চাই। আরেকটা সুযোগ পাব কলকাতায়। সেটা কাজে লাগাতে চাইব।’
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ভারত
ইন্দোর টেস্ট
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৫০ অলআউট ও ভারত প্রথম ইনিংস : ৪৯৩/৬ ডিক্লেয়ার
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : রান
সাদমান ইসলাম বোল্ড ব ইশান্ত ৬
ইমরুল কায়েস বোল্ড ব উমেশ ৬
মোমিনুল হক এলবিডব্লিউ ব অশ্বিন ৭
মোহাম্মদ মিঠুন ক আগারওয়াল ব সামি ১৮
মুশফিকুর রহিম ক পূজারা ব অশ্বিন ৬৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক রোহিত ব সামি ১৫
লিটন দাস ক অ্যান্ড ব অশ্বিন ৩৫
মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ব উমেশ ৩৮
তাইজুল ইসলাম ক সাহা ব সামি ৬
আবু জায়েদ অপরাজিত ৪
এবাদত হোসেন ক উমেশ ব অশ্বিন ১
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৯, নো-১, ও-১) ১৩
মোট (অলআউট, ৬৯.২ ওভার) ২১৩
উইকেট পতন
১/১০ (ইমরুল), ২/১৬ (সাদমান), ৩/৩৭ (মোমিনুল), ৪/৪৪ (মিঠুন), ৫/৭২ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৩৫ (লিটন), ৭/১৯৪ (মিরাজ), ৮/২০৮ (তাইজুল), ৯/২০৮ (মুশফিক), ১০/২১৩ (এবাদত)।
ভারত বোলিং
ইশান্ত : ১১-৩-৩১-১, উমেশ : ১৪-১-৫১-২ (ও-১), শামি : ১৬-৭-৩১-৪ (নো-১), জাদেজা : ১৪-২-৪৭-০,
অশ্বিন : ১৪.২-৬-৪২-৩।
ফল : ভারত ইনিংস ও ১৩০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মায়াঙ্ক আগারওয়াল (ভারত)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ইত্তেফাক/বিএএফ