মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইত্তেফাকের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে অর্থমন্ত্রী

সিঙ্গেল ডিজিট ও সরল সুদহার বাস্তবায়ন হবেই

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ২২:০০

ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন এ খাতটিকে সঠিকভাবে দেখাশোনা করা হয়নি। অনিয়ন্ত্রিত ছিল। ফলে, বর্তমান অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তবে শিগিগরই এটি ঠিক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার মতে, সঠিক তদারকির অভাব ছিল। যদিও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের অবদান ব্যাপক। দেশের শিল্প বিকাশ থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নেও ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

সোমবার শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে যে হারে সুদ আরোপ করছে তা অযৌক্তিক। এত বেশি হারে সুদ নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তাই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার কথা হচ্ছে। একইভাবে সরল সুদহারের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এজন্য আমরাও সমানভাবে দায়ী। ব্যাংকগুলো যে কম্পাউন্ড হারে সুদ গুনছে তা নিয়ে কেউ কথা বলেনি। আমরা যেহেতু বলেছি, সেটি হবে। হতেই হবে। সিঙ্গেল ডিজিট এবং সিম্পল রেট বা সরল সুদ হার বাস্তবায়ন হবেই। এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার         বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

তাহলে বিলম্ব হচ্ছে কেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি আমরা। শিগিগরই আমরা আদালতের রায় পাব। রায় পেলে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হবে এবং তা কার্যকর করা হবে। সিঙ্গেল ডিজিট ও সিম্পল রেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে দৃঢ়চেতা অর্থমন্ত্রী তার ব্যাবসায়িক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি নিজে কখনো ঋণখেলাপি হইনি। কিন্তু এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা আসলেই দুরূহ। শুধু বেশি সুদই নয়, ব্যাংকাররা গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করে না।

ব্যাংকিং খাতের পরিচালকদের বেনামি ঋণসহ নানা অসঙ্গতি দূর করা এবং নানা অনিয়ম খতিয়ে দেখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নজর দিয়েছি। ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলোকেও তাদের গ্রাহকদের সম্মান করতে হবে। গ্রাহকদের ব্যাপারে বুঝতে হবে। এটাতো সেবা খাত। গ্রাহকদের ভালো সেবা দিতে হবে, ভালো ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি যারা ভালো গ্রহীতা তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। যারা খারাপ, ইচ্ছেকৃত খেলাপি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমরা চাই ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হোক। দীর্ঘদিন ধরে বড়ো অঙ্কের খেলাপি ঋণ ধরে না রেখে বরং নিয়মিত করার মাধ্যমে তাদেরকে পুনরায় ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাতে ব্যাংক-গ্রাহক উভয়ই বাঁচবে। বকেয়া টাকা পাওয়া যাবে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অন্যথায় টাকাগুলো পাওয়া যাবে না। তাতে ব্যাংকের বরং বেশি ক্ষতি। যে অর্থ ব্যাংক আয় করেনি, তার ওপর কর দিতে হচ্ছে। সুযোগ না দিলে এক সময় রাইট অফ (অবলোপন) করতে হবে। অর্থমন্ত্রীর মতে, যা হয়ে গেছে— এখন সময় দিয়ে টাকাগুলো বের করে আনতে পারলেই লাভ। তারপর যদি কোনো ব্যাংক খারাপ করে তার জন্য ঐ ব্যাংক দায়বদ্ধ থাকবে। ‘এক্সিটটা’ এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতে দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে সোমবার। রায়ের জন্য আগামী ৩ নভেম্বর দিন ঠিক করেছে উচ্চ আদালত। অর্থমন্ত্রী জানান, রায় পেলে মাস খানেকের মধ্যেই বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হবে।