মিরপুর বেড়িবাঁধের তুরাগ তীর
নিলয় মামুন
মিরাজ হোসাইন (ছদ্মনাম)। পড়েন উত্তরার একটি কলেজে একাদশ প্রথম বর্ষে। প্রায়ই তিনি এ এলাকায় ঘুরতে আসেন। কিন্তু কারণ জানা গেল অন্য একজনের কাছে। তিনি বলেন, এখানে নৌকা ভাড়া করে নদীর মধ্যে গিয়ে অসামাজিক কার্যক্রম করার সুযোগ রয়েছে। নৌকার মধ্যে ওপরে ছাদের মতো করে ঢেকে এসব অপকর্ম করার ব্যবস্থা করে দেন স্বয়ং নৌকার মাঝি। তবে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। শুধু অসামাজিক কার্যকলাপ নয়, সেখানে মাদকেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সব ধরনের মাদক তারা আগে থেকেই নিয়ে রাখে। বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় সবাই এ ব্যাপারে জানলেও সহজে মুখ খুলতে চান না কেউই। তারা এক প্রকার সিন্ডিকেট করে এ অপকর্ম পরিচলানা করছেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে খাবার হোটেলের পাশে ছোটো ছোটো ঝুপড়ি ঘরেও ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে অনুরূপ। বোটানিক্যাল গার্ডেনকে কেন্দ্র করে বিনোদন পিয়াসীরা ঘুরতে আসার কারণে নদীরপাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান। এই এলাকায় ঘুরতে আসা মানুষ বিনোদনের জন্য এলেও এটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে অনিরাপদ এলাকা। অন্যদিকে নিজস্ব জমির ওপরে ব্যক্তিমালিকাধীন বিভিন্ন পার্ক গড়ে উঠেছে এখানে। নির্ধারিত টিকিটে যুগল ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এই পার্কের তত্ত্বাবধায়ক জানান, এটি আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি; এখানে কোনো ঝামেলা নেই। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের ড্রেস পরা অবস্থায়ই সেখানে আনাগোনা করতে দেখা গেছে।
মাদকের বিষয়ে মাহতাব আলী নামে একজন জানান, মাদক আর খারাপ কাজ এই এলাকায় হরহামেশাই চলে। এটা সবাই জানে। এসব নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো। এখানকার মানুষ বেশি ভালো না। এখানে এসব নিয়ে খুন-খারাবিও হয়।
জানা যায়, মিরপুরের অর্ধশতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে ছোটো-বড়ো প্রায় শতাধিক চিহ্নিত স্পটে নিয়মিত চলে নানা ধরনের মাদকদ্রব্যের রমরমা বাণিজ্য। এর বাইরেও আছে ছোটোখাটো অসংখ্য স্পট। তবে মিরপুরের শাহ্ আলী থানা এলাকাটিতে ঘনবসতি ও বস্তি এলাকা বেশি হওয়ায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকা ঘিরে মাদক ব্যবসা বেশি জমজমাট। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নিয়ে মাদক ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহয়তা করছেন। ফলে শাহ্ আলী থানার কিছু চিহ্নিত এলাকায় ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্যাথেডিনসহ সব ধরনের মাদকই এখন মিলছে মুড়ি-মুড়কির মতো। শাহ্ আলী থানাধীন গুদারাঘাট এলাকাটি থানা এলাকার মাদকের মূল আখড়া বলে জানা যায়। এমন অসামাজিক কার্যক্রম ও মাদকের বিষয়ে শাহ আলী থানার কর্মকতা (ওসি) মো. সালাহউদ্দীন ইত্তেফাককে বলেন , এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে নেই। তবে অবশ্যই এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।