মো. বিল্লাল হোসেন
বাংলাদেশে একটা সময় ছিল যখন মানুষ বাজারে যেত চটের ব্যাগ নিয়ে; কিন্তু আশির দশকে শুরু হয় পলিথিন নামক পলিমারের ব্যবহার। এরপর ধীরে ধীরে দৈনন্দিন জীবনের সব কেনাকাটায় ব্যবহূত হতে শুরু করল পলিথিন। একটা সময় মারাত্মক আকার ধারণ করল পলিথিনের ব্যবহার যেটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আইন শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত। এরপর অনেক সময় চলে গেছে; কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। এখন পলিথিন মানবজীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম ক্রান্তিলগ্নে এসে বাংলাদেশের এক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মেদ খান পলিথিনের বিকল্প ভাবতে শুরু করেন এবং সেটি তিনি পাট দিয়ে তৈরি করতে চান। এরপর থেকেই কাজ শুরু করেন তিনি এবং ২০১৫ সালে তিনি পাট থেকে পলিমার ব্যাগ তৈরি করতে সক্ষম হন। মূলত পাটের সেলুলোজ নামক পলিমার ও অন্যান্য কম্পোজিট উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় পাটের এই পলিমার ব্যাগ। ২০১৭ সালে বিজেএমসির পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের একটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে শুরু হয় উত্পাদন। প্রকল্পটি ‘সোনালি ব্যাগ প্রকল্প’ নামে শুরু করা হয়। কারণ পাটকে সোনালি আঁশ বলে অভিহিত করা হয়—এটি যেহেতু পাট থেকে তৈরি তাই এর নামও সোনালি ব্যাগ রাখা হয়। বিজেএমসির মতে—পাটের তৈরি এই ব্যাগটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পচনশীল বা বায়োডিগ্রেডেবল। বায়োডিগ্রেডেবল বলতে বোঝায়—যেসব পদার্থ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে বা পচে যায়। এটি সোনালি ব্যাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সোনালি ব্যাগ একটি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ অর্থাত্ পরিবেশের ওপর এটির কোনো বিরূপ প্রভাব নেই। এর আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—এটি পানিতে স্থায়ী, পুনঃপ্রক্রিয়াযোগ্য, সিনথেটিক ফাইবারের তুলনায় কম খরচে উত্পাদন সম্ভব, ক্ষতিকর ধোঁয়ার পরিমাণ কম ও পলিথিন ব্যাগের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি প্রসারণযোগ্য। এছাড়াও মাটিতে এটি মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পচে যায় সেখানে পলিথিন পচতে সময় লাগে ২০০ থেকে ৩০০ বছর। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশবান্ধব ব্যাগের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কারণ পলিথিনের ব্যবহার আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীকে অবাসযোগ্য করে তুলেছে, ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণিকুল, গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাণী। এবং ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের অস্তিত্বকে। ঠিক এই সময়ে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব এই সোনালি ব্যাগ একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বাংলাদেশের জন্য। এই আবিষ্কার পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনিয়েছে। এবছরের ডিসেম্বর মাসে বাজারজাত করা হবে সোনালি ব্যাগ এবং ‘সোনালি ব্যাগ’ প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব ব্যাগের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এটি যেমন পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করবে এবং আমাদের উপহার দেবে দূষণমুক্ত একটি নির্মল পরিবেশ। তেমনই আমরা অর্থনৈতিকভাবেও হবো স্বাবলম্বী, কেননা পাট দিয়ে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়, তাই পাটের চাহিদা বাড়বে অর্থাত্ প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হবে এবং পাটচাষে আগ্রহী হবে। তাছাড়া বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে সোনালি ব্যাগ উত্পাদন করার জন্য যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ‘সোনালি ব্যাগ’ বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় নতুন এক সংযোজন। পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের হাতিয়ার হবে এই ব্যাগ। সোনালি ব্যাগ বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের পথে আরো একধাপ নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে উন্নয়নের রোল মডেল।
n লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ