মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সড়কে শৃঙ্খলাই পারে দুর্ঘটনা কমাতে

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩৭

আসিফ হাসান রাজু

খবরের পাতায় এখন প্রতিদিনকার ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটায় প্রাণহানির সংবাদ। সড়কে দুর্ঘটনা যেন কোনো কিছুতেই থামছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার পেছনে সড়কে শৃঙ্খলা না থাকাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যদিও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে টেলিভিশনের টকশো, সেমিনার, আলোচনায় নানা ধরনের পরামর্শ উচ্চারিত হয়ে আসছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলার বড়োই অভাব। কেননা, চালক তার গাড়ি লেন ধরে চালায় না, একই রাস্তায় ভিন্ন ধরন ও গতির গাড়ি, ফুটপাতগুলো দখলে, ফুটওভারব্রিজ থাকলেও তার বেশির ভাগই দখলে, অধিকাংশ আবার ব্যবহারের অনুপযোগী সঙ্গে নাগরিক সচেতনতার অভাবতো রয়েছেই। এ অবস্থায় শুধু জরিমানা করে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। জনসচেতনতার পাশাপাশি রাস্তায় সার্বিকভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হয় না। দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, সড়কব্যবস্থা উন্নতকরণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করার সঙ্গে সঙ্গে এটি নিশ্চিত করতে হবে ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় যেন চলতে না পারে। পাশাপাশি আইনের যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আমরা দেখেছি প্রতিবার দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তবে সেই তদন্ত কোনোদিন হয়ত আলোর মুখ দেখে না। আর সঙ্গত কারণে দোষীদের শাস্তিও হয় না। আর এভাবে প্রতিবার বিচারহীন, প্রতিকারহীন অবস্থা চলতে থাকলে সড়কে কখনো শৃঙ্খলা তো ফিরবেই না পাশাপাশি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলবে। এমন অবস্থায় প্রশ্ন এসে যায়—আর কত প্রাণ গেলে তবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে? এই হত্যাযজ্ঞ থামতে আর কত মৃত্যু মিছিলের প্রয়োজন? এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে গড়ে আমাদের দেশের জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য মামলা হলেও আমরা দৃশ্যমান তেমন কোনো শাস্তি দেখতে পাইনি। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমার পরিবর্তে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। দেশে সড়ক অবকাঠামো এবং স্থলভাগের আয়তন অনুপাতে জনসংখ্যার চাপ বেশি। সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন। দেখা যায় অধিকাংশ চালক নিয়ম মেনে গাড়ি চালান না। ফলে সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ শতাংশ রাস্তা প্রয়োজন। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মেইন রোডের পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। এই ৩ শতাংশের ৩০ শতাংশ দখল করে রেখেছে আবার অবৈধ দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকারের। এছাড়া পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাত প্রাইভেট গাড়ির দখলে রয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে—রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার পাশেই যেসব দোকান ও আবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এ ধরনের কার্যক্রম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। এখন  যে কোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরে পথচারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ফুটওভারব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। এ ব্যাপারে পথচারীদেরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। মহাসড়কগুলোতে যেন চালকেরা নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় সেদিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ঘণ্টায় যে গতিবেগে গাড়ি চালাবার কথা আইনে বলা আছে যদি কোনো চালক তা অমান্য করে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সড়কের অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। আর দুর্ঘটনা তুলনামূলক ভাবে কমে আসবে।

n লেখক :শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়