মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কমিউনিটি পুলিশিং ও জনসম্পৃক্ততা

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩০

২৬ অক্টোবর সারা দেশে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়া কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদ্যাপিত হইল। দেশে এই ব্যবস্থা বিস্তৃত হওয়াটা খুবই ইতিবাচক বলিয়া সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন। কমিউনিটি পুলিশিং এমন একটি ব্যবস্থা, যেইখানে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অপরাধবিষয়ক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য পুলিশ ও জনগণ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথভাবে কাজ করিয়া থাকে। কমিউনিটি পুলিশিং কোনো চিরাচরিত অভিযান বা কর্মসূচি নহে। অর্থাত্ পুলিশ শুধু অপরাধীদের গ্রেফতার, তদন্ত, আলামত সংগ্রহ অথবা অপরাধীদের আদালতে প্রেরণের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। অপরাধের কারণ খুঁজিয়া বাহির করা এবং অপরাধীদের সংশোধনের মতো সামাজিক কল্যাণকর কাজেও যৌথভাবে অংশগ্রহণ করিয়া থাকে। ইহা একদিকে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাইয়া থাকে, অন্যদিকে জনগণকেও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সচেতন করিয়া তোলে। আমরা জানি, বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। সেই ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং আমাদের দেশের জন্য একটি অতি জরুরি বিষয়। কমিউনিটি পুলিশিং-সম্পর্কিত একটি অস্পষ্ট ধারণা প্রাচীনকাল হইতেই ছিল। কিন্তু অষ্টাদশ শতকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট পিলের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করিয়া বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা জন অ্যালডারসন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইহার প্রচলন করেন। সীমিত আকারে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় টাউন ডিফেন্স পার্টি নামে স্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি রাত্রিকালীন পাহারাদার বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়া ইহা শুরু হয়। ইহার কর্মপরিধি এখন অনেক বিস্তৃত হইয়াছে।

আমরা আশা করি, পুলিশ ও জনগণের সমন্বয়ে এই কমিউনিটি পুলিশিং উত্তরোত্তর প্রশংসিত হইবে। সনাতনী পুলিশিং বরং জনগণের নিকট হইতে পুলিশ প্রশাসনকে বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলে। কিন্তু সেই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করা, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই পুলিশের অবকাঠামোগত, গুণগত পরিবর্তন আসিতেছে। বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের থানা, ব্যারাক নির্মাণ হইতেছে। কিন্তু তাহার পরও অনেক সমস্যা রহিয়া গিয়াছে। পত্রিকান্তরে সংবাদ হইতে জানা গিয়াছে, দেশে ৬৫৭টি থানার অধীনে  ৪৫৯টি পুলিশ ফাঁড়ি রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ২২৮টি ফাঁড়িই হয় কোনো স্কুলঘরে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় লইয়া কাজ করিতেছে। যাহার ফলে একদিকে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হইতেছে, অন্যদিকে পুলিশেরও তো তত্পরতা ও কর্মে ব্যাঘাত ঘটিতেছে। ঢাকায়, বিশেষ করিয়া পুরান ঢাকায় কমিউনিটি সেন্টারে থানা বসাইয়া কাজ চালানো হইতেছে। এইসব ক্ষেত্রে পুলিশের স্থায়ী স্থাপনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরির ব্যবস্থা করিতে হইবে। স্কুলে ফাঁড়ি বসাইলে বা কমিউনিটি সেন্টারে থানা বসাইলে জনগণের সঙ্গে অসন্তোষের সম্পর্ক তৈরি হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যে উদ্দেশ্য তাহা ব্যাহত হইতে পারে। সর্বোপরি মনে রাখিতে হইবে, যেই দেশে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যত নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়, সেই দেশে অপরাধের সংখ্যাও তত কমিতে বাধ্য। আর আপরাধ কমিয়া আসা মানেই জনগণের মধ্যে শাস্তি ও স্বস্তি ফিরিয়া আসা।